চকরিয়ায় সুদের টাকা না পেয়ে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

চকরিয়া প্রতিনিধিঃ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী গ্রামে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সুদি ব্যবসায়ী শওকত ওসমানের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবথূ নুর আয়শা গাছের সাথে বেধে মারধর করে শওকত।  এ ঘটনায় পুলিশ শওকত ওসমানের বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। সেই সঙ্গে নুর আইশাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বরইতলী ইউপির মোরাপাড়ার হাপানিয়াকাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে শওকত ওসমানের বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

নুর আয়শা ওই এলাকার আলী আহমদের স্ত্রী। আলী আহমদ একজন দিনমজুর। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

বরইতলী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নিয়াজুল ইসলাম বাদল বলেন, কয়েক মাস আগে নুর আয়শা তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য শওকত ওসমানের কাছ থেকে চার হাজার টাকা সুদের ওপর ধার নেয়। নুর আয়শা সুদ ও আসলসহ আট হাজার টাকা পরিশোধও করেন।

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শওকত ওসমান আরো দুই হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু নুর আয়শা ওই টাকা বৃহস্পতিবার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তা মানতে নারাজ শওকত ওসমান। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শওকত ওসমান গৃহবধূ নুর আয়শাকে একটি গাছের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর ও অমানবিক নির্যাতন চালায়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে  মঙ্গলবার দুপুরের দিকে। কিন্তু ভুক্তভোগী নারী এই বিষয়ে কাউকে কিছু না বলায় জানা যায়নি। পরে আজ বুধবার সকালে ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হলে জানাজানি হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ সুদ ব্যবসায়ী শওকত ওসমানের বাবা জহির আহমদকে আটক করে নিয়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, শওকত ওসমান একটি গাছের সঙ্গে শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখেন নুর আয়শাকে। এ সময় নুর আয়শা তার বাঁধন খুলে দিতে বলেন। কিন্তু নুর আয়শার আহবানে সাড়া না দিয়ে শওকত ওসমান কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে নুর আয়শাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং চুলের মুটি ধরে টানতে থাকে ও চুলের মুটিও গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। পরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নারী নুর আয়শাকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় শওকত।

বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ঘটনাটি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি ইউএনও ও ওসিকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

ভুক্তভোগী নুর আয়শার বরাত দিয়ে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহাতাবুর রহমান বলেন, কয়েক মাস আগে শওকত ওসমানের কাছ থেকে সুদের ওপর চার হাজার টাকা ধার নেন। এরই মধ্যে আট হাজার টাকা পরিশোধও করেন। আরো দুই হাজার টাকা দাবি করে শওকত ওই গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে।

চকরিয়ার ওসি (তদন্ত) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ঘটনাটি ফেসবুকে দেখার পরপরই ওসির নিদের্শে ঘটনাস্থলে যাই। অভিযুক্ত শওকতকে না পাওয়ায় তার বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •