ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ এসি বিস্ফোরণে মৃত্যুর মুখে যুবক

এম.এ আজিজ রাসেল:
কক্সবাজার ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ এসি বিস্ফোরণে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক যুবক। শনিবার (০৩ এপ্রিল) সকাল ১২টার দিকে হাসপাতালের ৫ম তলায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়সারা ভূমিকা দেখা গেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ৫ম তলার সি—৫১৩ ও সি—৫১৭ কেবিনের এসি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে বিকল হয়ে পড়ে। বিষয়টি কতৃর্পক্ষকে একাধিকবার অবহিত করে কর্মচারি কেফায়েত। কিন্তু তার কোন কথাই আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে শনিবার মেয়াদোত্তীর্ণ নষ্ট হওয়া এসি সার্ভিসিং করতে আসে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের টেকনিশিয়ান জাহেদুল ইসলাম। প্রথমে ৫ম তলার সি—৫১৭ কেবিনের এসি সার্ভিসিংয়ের এক পর্যায়ে কমপ্রেসার বিস্ফোরণ হয়। এতে টেকনিশিয়ান জাহিদ গুরুতর জখম হয়ে ৫ম তলা থেকে ৪র্থ তলায় সটকে পড়ে। সেফটি বেল্ট না থাকলে নিশ্চিত তার মৃত্যু হতো বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। আহত টেকনিশিয়ান জাহিদকে ছেড়ে নিরাপদে হাসপাতাল ত্যাগ করে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্মীরা। তাকে চিকিৎসা সেবা দিতেও গড়িমসি করে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ। পরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে শুরু হয় চিকিৎসার নামে নাটকীয়তা।
এদিকে এসি বিস্ফোরণের শব্দে হাসপাতাল জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। দিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকে হাসপাতালে আসা সেবা প্রার্থীরা। ভয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় অনেক রোগীর। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রোগীর স্বজনেরা জানান, এসিটির মেয়াদ ছিলনা। এটি না বদলিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সার্ভিসিং করা কোনভাবেই সমুচিত না। কিছুদিন আগেও এক পুলিশ কর্মকর্তার পুত্রের নাকে ভুল অপারেশনের কারণে মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কতৃর্পক্ষের মানুষের জীবন নিয়ে খেলার কোন অধিকার নেই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কর্মকর্মতারা অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে মিজান নামে এক কর্মচারি জানান, গ্রি কোম্পানীর এসিটি অনেক পুরোনো ও জরাজীর্ণ। ঝুঁকি নিয়ে এটা সার্ভিসিং করতে গিয়ে আমাদের সহকর্মী জাহিদ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
গেল কিছু দিম আগে
ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ২০১৮ সালে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ সিকদার মহলস্থ ইলেকটে্্রা মার্ট লি. এসিটি কেনা হয়। যার মেয়াদ রয়েছে ৫ বছর। কোম্পানীর সাথে আমাদের সার্ভিসিংয়ের চুক্তি রয়েছে। তাই এসিটি বিকল হয়ে পড়লে আমরা তাদের খবর দিই। পরে এসি সার্ভিসিং করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বক্তব্য নিতে ইলেকটে্্রা মার্ট লি. টেলিফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের পরিচালক জামায়াত নেতা ডা. শাহ আলম বলেন, এখানে আমার বলার কিছু নেই। স্ব স্ব বিভাগে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা এ বিষয়ে বক্তব্য দিবে। তবে আহত ব্যক্তিকে আমরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছি।
উল্লেখ্যঃ কক্সবাজারে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বেসরকারী হাসপাতাল ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে গলাকাটা বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় মহলকে ম্যানেজ করে নানা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে।
জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধে দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত (কার্যকর) জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মালিকাধীন হাসপাতাল কক্সবাজার শহরের ‘ফুয়াদ আল খতিব’। মীর কাশেম আলীর (বর্তমানে কাশেম আলীর পরিবার) পক্ষে দীর্ঘদিন এটি পরিচালনা করে আসছেন জামায়াতপন্থি চিকিৎসক ডা. শাহ আলম। বর্তমানে তিনি (ডা. শাহ আলম) হাসপাতালটির চেয়ারম্যান। স্থানীয়রা এটিকে আল ফুয়াদ হাসপাতাল হিসেবেই চিনে।
আল ফুয়াদ হাসপাতালে অপারেশন, সিজার, পরীক্ষা—নিরীক্ষা, ভর্তি ও চিকিৎসার নামে বেপরোয়াভাবে গলা কাটছে রোগিদের। এক প্রকার জিম্মি করে টাকা আদায় করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় একের পর এক রোগির মৃত্যু বা পঙ্গু হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন একটি ঘটনারও ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে দিনদিন রোগিদের সাথে বেপরোয়া আচরণ করে যাচ্ছে আল ফুয়াদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ আছে, কতিপয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জামায়াতের এই হাসপাতাল থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আশ্রয়—প্রশ্রয় দেয়। একারণে বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •