কাল জামিন পাচ্ছেন কি খালেদা জিয়া?

সিটিজি টাইমসঃ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতুহল বাড়ছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বেগম জিয়া জামিন বিষয়ে আদেশ দেবেন সুপ্রিম কোর্ট।

সেই আদেশে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জামিন পাচ্ছেন কি পাচ্ছেন না- এ নিয়েই এখন বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবস্তরের নেতাকর্মীদের জল্পনা-কল্পনা চলছে।

আপিলে খালেদা জিয়ার ‘জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে’ বলে মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে মতিঝিলে নিজ চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির মিটিং শেষে সাংবাদিকদের ড. কামাল বলেন, ‘মানবিক কারণে খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার যোগ্য। আজকের সভায় স্পষ্টভাবে আলোচনা হয়েছে।

আমাদের লিখিত বক্তব্যেও সব আছে। সুযোগ অবশ্যই আছে, সুযোগ অবশ্যই আছে…। এর থেকে পরিষ্কার করে আর কী বলবো?’

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির’ জন্য সরকার দায়ী থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা।

যদিও বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার বলা হচ্ছে- দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। তাই আইনি পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়।

তাঁর মুক্তির জন্য রাজপথে লড়াইয়ের বিকল্প নেই। তবে দলটির একাংশ আদালতের ওপর আস্থা রেখে ধারণা করছেন, আগামীকাল জামিন পেতে পারেন বেগম জিয়া।

 

 

চ্যারিটেবল মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে বেগম জিয়ার জামিন বাতিল হয়েছিল। পরে তাঁর আইনজীবীরা আপিল করলে সর্বোচ্চ আদালতে শুরু হয় জামিন আদেশের শুনানি।

এরই ধারাবাহিকতায় গেল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেগম জিয়ার আইনজীবীদের করা আবেদনের আংশিক শুনানি নিয়ে জামিন আদেশের জন্য ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

৫ ডিসেম্বরেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গেল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের বেঞ্চে বেগম জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।

এদিন বেগম জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেগম জিয়ার জামিন আবেদন বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য থাকলে ওইদিনও পূর্ণাঙ্গ শুনানি গ্রহণের ইচ্ছে পোষণ করে আদেশের জন্য ২৮ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

২৮ নভেম্বর আংশিক শুনানি গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে রিপোর্ট জানতে চান আদালত।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের জামিন খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ওইদিনই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১৪০১ পৃষ্ঠার এ আপিল আবেদন দাখিল করা হয়।

১৭ নভেম্বর জামিন আবেদন উপস্থাপনের পর চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান শুনানির জন্য ২৫ নভেম্বর তা পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।

দুদকের করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩১ জুলাই বেগম জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

 

 

এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে বেগম জিয়ার আইনজীবীরা আপিল আবেদন দায়ের করেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে বেগম জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

সেইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে মামলার নথি তলব করেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয় মামলার নথি।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া।

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে এখন ১৭টি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এই দুটি মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

অরফানেজ মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল আপিল বিভাগে ও চ্যারিটেবল মামলায় ৭ বছরের সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •