শহীদ এটিএম জাফর আলম নিয়ে হামিদুল চৌধুরী’র বিতর্কিত বক্তব্য: সর্বত্র ক্ষোভ

 

এম.এ আজিজ রাসেল:
সম্প্রতি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরী বর্ধিত সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ এটিএম জাফর আলমকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বিতর্কিত ওই বক্তব্যে অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, “এটিএম জাফর আলম কি চাঁদাবাজি করতে গিয়ে মরেছে নাকি মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে মরেছে আমরাতো জানিনা। বদমাইশি করেছে তোমার ভাই, এখন কোথায়? সবকিছু এটিএম জাফর আলমের নামে করা হচ্ছে। যাত্রী ছাউনী নিরান্নব্বই বছরের জন্য লিজ নিয়েছো। আর কোন বাপের বেটাকে দিছে। মুক্তিযোদ্ধা এখানে আর নাই? তাদের নামে কোথায় কি হয়েছে সব শহীদ জাফর।
বর্ধিত সভায় শহীদ এটিএম জাফর আলমকে জড়িয়ে তিনি আরও বলেন, “ওইটাও শহীদ জাফর আলম নৈশ বিদ্যালয়, শহীদ জাফর আলম এটিএম স্কুল, এখানে টেকনাফ রোড শহীদ জাফর, ডিসি সম্মেলন কক্ষ এটিএম জাফর আলম, রাবেতার ওখানে মাল্টিমিডিয়া জাফর আলম, সৈকতের ওখানে জাফর আলম। জাফর আলম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে মরেছে নাকি মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে মরেছে আমরাতো জানিনা।”
এদিকে ৭১ এর রণাঙ্গণের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শহীদ এটিএম জাফর আলমকে নিয়ে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের হামিদুল হক চৌধুরীর এমন কাÐজ্ঞানহীন বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সুশীল মহলে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারাও।
এছাড়া হামিদুল হক চৌধুরীর বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবার কোটবাজারে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে হাজার হাজার মানুষ। শহীদ এটিএম জাফর আলম স্মৃতি পরিষদ উখিয়া উপজেলা শাখা আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে শহীদ এটিএম জাফর আলমের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর চৌধুরী ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন মিন্টু বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ‘শহীদ এটিএম জাফর আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ হন এটিএম জাফর আলম।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ এটিএম জাফর আলমকে স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, শহীদের স্মৃতি স্বরূপ হিসাবে কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালুসহ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।’
বক্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ও উখিয়ার কৃতি সন্তান শহীদ এটিএম জাফর আলমকে জড়িয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী নগ্ন ভাষায় যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। তিনি ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অসম্মান করেছেন। অবিলম্বে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে হামিদুল হক চৌধুরীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য সভায় দাবি জানানো হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।’

বক্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এটিএম জাফর আলমকে জড়িয়ে বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান করায় অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানান। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অসম্মান ও মানহানি করার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কলিম উল্লাহ বলেন, ‘শহীদ এটিএম জাফর আলমকে কটুক্তি করা মানে বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটুক্তি করা। কারণ তিনি ব্যক্তিগত কাজে মৃত্যু বরণ করেননি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতেই এটিএম জাফর আলম মৃত্যু করেন। আর যদি কেউ ঘরে বসেও পাকিস্তানিদের হাতে মৃত্যু বরণ করেন তবে তিনিও শহীদ হিসেবে গণ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে যুদ্ধ হয়নি। কিন্তু এখানে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাই বলে তাদের মুক্তিযোদ্ধা বলা হবে না এমনতো নয়। এটিএম জাফর আলম মুক্তিযুদ্ধ না করলেও তার মানসিকতা ছিল মুক্তিযুদ্ধ করার।

এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে এটিএম জাফর আলম মারা যায়। মুক্তিযোদ্ধা না হলেও একজন শহীদ হিসাবে আমরা তাকে সম্মান করতে পারি। কারণ শহীদের মর্যাদা যে পায়, সে মুক্তিযোদ্ধারও মর্যাদা পেতে পারে। কারণ সে নিজের জন্য নয়, দেশের জন্যই প্রাণ দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ উখিয়ায় স্থানীয়ভাবে অনেক ব্যাপার রয়েছে। আমি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীকে সম্মান করি। কিন্তু একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে সাথে সাথে এমন বক্তব্য বলে ফেললেন তিনি। যার দায়ভার রাজনৈতিকভাবে উনার কাধে চলে আসবে। অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর ভাবা উচিত অন্যকে ছোট করতে গিয়ে যেন নিজে ছোট না হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান বলেন, “এটিএম জাফর আলমের নামে যখন সড়কসহ অনেক কিছু হয়েছে। তখন কেন তিনি কিছু বলেননি। এখন সময় বুঝে কথা বলা একপ্রকার সুযোগ সন্ধানী। এটাতো সত্যবাদীতা নয়।”
তবে অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘গত ৩ অক্টোবর উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের জরুরী বর্ধিত সভায় আমার বক্তব্যের একটি অংশকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে স্বার্থন্বেষী একটি মহল যে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে তা দেখে আমি সত্যিই মর্মাহত।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমার বক্তব্যে বা জীবনাচারে কখনোই কাউকে যেমন হেয় করার চেষ্টা করিনি তেমনি সবসময় চেষ্টা করেছি সততার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে।’
তিনি আরও বলেন, উখিয়া আওয়ামী লীগের ইতিহাসে দীর্ঘদিন ধরে প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে আমি নিস্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে উখিয়া আওয়ামী লীগের একটি চিহ্নিত গ্রæপ নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সাবেক কেবিনেট সচিবের ভাই শাহ আলমের প্রত্যক্ষ মদদে ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে আওয়ামী লীগের ইমেজ ক্ষুন্নের চেষ্টা করছে। শাহ আলম কথায় কথায় তার শহীদ ভাই এটিএম জাফর আলমের নাম ব্যবহার করে যে ন্যাক্কারজনক ভুমিকা পালন করছে তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি বলেছিলাম স্থানীয়ভাবে অপরিচিত শহীদ এটিএম জাফর আলমের নাম ব্যবহার করে ভুমি দখল, বাজার দখলসহ অসংখ্য যে অনিয়ম করছে।
জানা যায়, টগবগে যুবক এ.টি.এম জাফর আলম বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে মায়ের আঁচল ছেড়ে পড়তে গিয়েছিলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে যুগে মায়েরা সন্তানদের আগলে রাখতেন নিজ চৌহর্দী সীমানায়, সে যুগে মমতাময়ী মায়ের স্নেহের পরশ বুলানো আদর ভালবাসার স্পর্শ পরিত্যাগ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন যে যুবক, সে যুবকের মনের গভীরে অন্য দশজনের মত অব্যক্ত পুঞ্জিভূত স্বপ্নের সাথে মিশ্রিত ছিল হয়তো মধ্যবিত্ত একটা পরিবারের হাজারো স্বপ্ন। তুখোড় মেধাবী সে যুবক শিক্ষাজীবনের সবক্ষেত্রে রেখেছিলেন মেধার স্বাক্ষর। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রও বেছে নিয়েছিলেন। তৎকালিন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (সিএসপি) পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন এসডিও হিসেবে। কিন্তু বাধ সাধে নিয়তি! পাকবাহিনীর নির্মম বুলেট স্তম্ভিত করে দেয় সবকিছু। সম্ভাবনাময়ী যুবক লুটিয়ে পড়েন চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাসে। রক্তে রঞ্জিত হল ছাত্রাবাস। রঞ্জিত রক্ত হলের সিঁড়ি বেয়ে সবুজ ঘাসের বুকে হবু স্বাধীন বাংলাদেশের কল্পিত পতাকা এঁকে ঘুমিয়ে পড়ে যুবক। মায়ের গগনবিদারী আর্তনাদও ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি যে হতভাগ্য যুবকের, তিনি আমাদের গর্বের ধন শহীদ এটিএম জাফর আলম। যিনি নিজের জীবন তুচ্ছ করে, কাপুরুষতা পরিহার করে হায়েনা রূপি পাকবাহিনীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বীরবেশে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার ত্রিশ লক্ষ শহীদের একজন হয়ে বেঁচে আছেন দেশের মানুষের মনমন্দিরের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার আসনে।
শহীদ এ.টি.এম. জাফর আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে প্রথম শহীদ হন। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ছাত্র নেতা। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ২০১৯ সালে তাকে “স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়। শহীদ এ.টি.এম জাফর আলম এর ছোট ভাই শফিউল আলম দীর্ঘদিন সততা ও নিষ্টার সাথে মন্ত্রী পরিষদ সচিব পদে দায়িত্ব পালন করে কিছুদিন আগে বিদায় নেন।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতিঃ
কক্সবাজার জেলাধীন উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখাঁ পালং গ্রামের মাতব্বর পাড়ার মরহুম তমিম গোলাল মাতব্বরের ৭ ছেলের একজন মরহুম ছৈয়দ হোছন মাস্টার। উখিয়ার প্রথিতযশা আলেম মরহুম ছগির আহমদ সাহেবও তমিম গোলাল মাতব্বরের সুযোগ্য সন্তান। মরহুম তমিম গোলাল মাতব্বরের কতিপয় উত্তরসূরীদের বর্ণাঢ্য জীবনী দেখলেই অনুমান করা যায় তৎকালীন বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে এই পরিবারের বেশ যশ-খ্যাতি ছিল। সেই প্রসিদ্ধ পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরী মরহুম ছৈয়দ হোছন মাস্টারের ঘরে ১৯৪৭ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ এটিএম জাফর আলম। মাতার নাম আলমাছ খাতুন। মরহুম ছৈয়দ হোছন মাস্টার ও আলমাছ খাতুনের দাম্পত্য সংসারের ৮ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে শহীদ এটিএম জাফর আলম ছিলেন সবার বড়। সম্প্রতি বিদায় নেয়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলম ও হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম মরহুম ছৈয়দ হোছন মাস্টারের সুযোগ্য সন্তান এবং শহীদ এটিএম জাফর আলমের আপন সহোদর।
শিক্ষাজীবনঃ
শহীদ এটিএম জাফর আলম স্থানীয় পর্যায়ে প্রাইমারী শিক্ষাজীবন শেষে মহেষখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি পাশ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দ্যেশ্য ভর্তি হয়েছিলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সহিত উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন শেষে তৎকালীন পিএসসি পরীক্ষায় নিজের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে নোয়াখালীর এসডিও হিসেবে নিয়োগও পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজ জন্মভূমির উপর পাকিস্তানী হানাদারদের নির্মম অনাচার রুখতে গিয়ে বিসর্জন দেন ব্যক্তিগত সুখ স্বপ্ন, পরিবারের চাওয়া পাওয়া। জীবনপন লড়ে শহীদ হন দেশের জন্য।
যেভাবে শহীদ হনঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চে চাকরীর নিয়োগপত্র গ্রহণ করে স্বপ্ন পূরণের সোপানে পা রাখতে না রাখতেই পরেরদিন ২৫ মার্চ স্বাধীনতার পক্ষে ডাক পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের। আর এতেই বেপরোয়া হয়ে উঠে রাক্ষুসে পাকিস্তানি বাহিনী। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে এগোতে থাকলে জীবন রক্ষার তাগিদে হলের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী সহ শহীদ জাফরের কাছের বন্ধুদের অনেকেই হল ছেড়ে চলে গেলেও কঠিন দেশপ্রেম তাঁর চলে যাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। রক্তে যার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের বীজ বোনা ব্যক্তিগত স্বপ্ন কি তাকে দমিয়ে রাখতে পারে? তাইতো বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়েও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে থেকে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে। ২৫ মার্চ শেষ রাতে দেশের অন্যান্য স্থানের মত পাক হানাদার বাহিনীর তান্ডবে পরিনত হয় শহীদ জাফরের প্রিয় শিক্ষাঙ্গন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলসহ কতিপয় ছাত্রাবাস। চরম ওই দুঃসময়ে শহীদ জাফর হাত গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র ছিলেন না। রাইফেল হাতে দেশপ্রেমের তীব্র স্পৃহা নিয়ে পাক হানাদারদের প্রতিহত করার সমর যুদ্ধে লড়তে লড়তে শহীদ হয়ে রচনা করেন এক বীরত্বকাব্য। নিজের জীবন, নিজের স্বপ্ন সেই সাথে হাজারো স্বপ্নে বিভোর থাকা একটা পরিবারের চাওয়া পাওয়াকে তুচ্ছ করে দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন ব্যক্তির চেয়ে দেশ বড়, নিজের ক্ষুদ্র চাওয়ার চেয়ে দেশের সাত কোটি মানুষের চাওয়াটা বেশি বড়।
দেশ স্বাধীন করার অভিপ্রায়ে নিজ এবং পারিবারিক স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে সমর যুদ্ধে শহীদ হওয়া এই যুবকের আত্মত্যাগে আমরা সত্যিই গর্বিত। কারণ, তাঁদের মহান ত্যাগের ফলে পাকিস্তানের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে আমরা হয়েছি স্বাধীন, বিশ্ব মানচিত্রে নতুন করে সগৌরবে চিত্রিত হয়েছে বাংলাদেশ নামক ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •