ইনানীর উপকুলবর্তী বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরারত ট্রলার বিস্ফোরণে নিহত ৭, আহত ৫

কক্সবাজারের ইনানীর উপকুলবর্তী বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরারত একটি ট্রলারে বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট ৭ জেলে মারা গেছেন এবং  আরো ৪ জেলে  রাজধানী ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ণ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কিন্তু ঘটনার পক্ষকাল অতিবাহিত হলেও এ বিস্ফোরণ ঘটনার রহস্য এখনও উদঘাটিত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান গতরাতে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমার নলেজে নেই। কেউ এবিষয়ে পুলিশকে অভিযোগ করেনি।’
বিস্ফেরণের ঘটনায় হতাহত সকল জেলের বাড়ী লক্ষীপুর জেলার রামগতি। তারা কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহরের বিমান বন্দর সড়কের বাসিন্দা শহীদুল হক সোহেলের মালিকানাধীন একটি মাছধরা ট্রলারের জেলে ছিলেন।
শহীদুল হক সোহেল বলেন, এটি একটি রহস্যময় ঘটনা। কারণ দূর্ঘটনার পর জাহাজের ইঞ্জিন, ব্যাটারি, গ্যাস সিলিন্ডার সব অক্ষত পাওয়া যায়। হঠাৎ করে কিছু একটা এসে ট্রলারের কেবিনের একপাশে বিধ্বস্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় যাতে সেখানে থাকা ২১ জেলে কমবেশি আহত হলেও ১২ জনের অবস্থা ছিল গুরুতর। তাদের মধ্যে রোববার রাত পর্যন্ত সাত জন মারা গেছে।
তিনি বলেন, আমার ট্রলারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ২১ জেলে গত ২৭ ফেব্র‍ুয়ারি সাগরে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু পরদিন দুপুরে বিস্ফোরণের ঘটনা শুনে তাদেরকে একটি ফিশিং বোট ও দুইটা স্পীড বোট নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ইনানীতে নিয়ে আসি। আর সেখান থেকে সড়কপথে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এনে তাদের ভর্তি করাই। পরে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকায় রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ জন মারা যায়।
মোঃ শরীফ নামের এক জেলে জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শহরের ফিশারীঘাটের বাঁকখালী নদী থেকে যাত্রা করে তারা আরও ১০/১২ ঘণ্টা ট্রলার চালানোর পর রাত তিনটা থেকে সাগরে জাল ফেলতে শুরু করে। পরদিন ২৮ ফেব্র‍ুয়ারি সকাল দশটা নাগাদ তারা সকালের খাবার খান।
তিনি বলেন, আমাদের সবাই উপরের অংশের কেবিনের ভেতরে ও বাইরে বসে খাবার খাওয়া মাত্র শেষ করেছিলেন আর একজন নীচে বসে জাল পাহারা দিচ্ছিলেন। কিন্তু সকাল এগারটার দিকে হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে কেবিন তছনছ হয়ে যায়। তখন সবাই সাগরে লাফ দিই। পরে যে একজন উপরে ছিলো সে রশি ফেললে আমরা একে একে উঠে আসি।
বেশ কিছুক্ষণ পর আমাদের কাছাকাছি এলাকা দিয়ে আরেকটি ফিশিং বোট যাওয়ার সময় আমরা তাদের অনুরোধ করি মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে এমন এলাকায় এগিয়ে দিতে।
ওই জেলে আরো বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্কে আসার পর ঘটনাটি ট্রলারের মালিককে অবহিত করি এবং তিনি আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন,  রহস্যজনক বিস্ফোরণে আহত জেলেদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির পর একে একে সাত জেলের জীবন প্রদীপ নিভে গেল- আমরা ঘটনার রহস্য বুঝতে পারলাম না।
ট্রলার মালিক শহীদুল হক সোহেল বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি। ওইদিন কোন বাহিনীর মহড়া ছিল কীনা এবং সে মহড়া থেকে ভুলক্রমে কোন গোলা এসে ট্রলারে পড়েছিল কীনা; তা-ও সংশ্লিষ্টদের কাছে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু তারাও সেই ধরনের আশংকার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন। আসলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেলেরাই ঘটনা সম্পর্কে ভাল বলতে পারবেন।
তবে  নিহতদের পরিবারকে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন থেকে বিশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোমিন।
কিন্তু এই বিস্ফোরণের কারণ জানা গেছে কীনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন- জেলেদের যারা সুস্থ হয়ে এসেছে তাদের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু তারা কারণ কিছু বলতে পারেনি।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারে গিয়ে মামলা করার জন্যও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে গতরাত পর্যন্ত কক্সবাজারের কোন থানায় এ ধরনের কোন অভিযোগ আসেনি বলে জানান পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে কোস্টগার্ডের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার কোস্টগার্ড স্টেশনের সিপিও আওলাদ হোসেন বলেন- সাগরে একটি ট্রলারে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, তা প্রত্যক্ষদর্শী জেলেরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে কোন বাহিনীর মহড়া থেকে যদি কোন গোলা এসে ওই ট্রলারে পড়ত, তাহলে ওই ট্রলারের সবকিছু ধ্বংশ হয়ে যেত।
  •  
  •  
  •  
  •  
  •