নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রাজারকুলে নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বে-সরকারি গণগ্রন্থাগার। কথিত আছে, আরাকানেরও আগে একসময় এইগ্রামে রাজাদের বসবাস ছিলো, কালক্রমে গ্রামের নাম তাই রাজারকুল। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ছোট্ট একটি দোকান ঘরে এখানে শুরু হয় জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার।
প্রতিষ্ঠার একবছর পর ২০১৮ সালে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার থেকে (কক্স/০৪/২০১৮) নাম্বারে বে-সরকারি পাঠাগার হিসেবে নিবন্ধন পায় পাঠাগারটি। বর্তমানে প্রায় চার হাজারের অধিক বই ও একশো জনেরও বেশি নিয়মিত পাঠক আছে পাঠাগারটিতে। প্রায় দশ হাজারের অধিক জনসংখ্যার এই রাজারকুল ইউনিয়নে বই পড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, অস্বচ্ছল ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, প্রি-প্রাইমারি শিক্ষা, ই-লাইব্রেরী, করোনাকালীন অক্সিজেন ব্যাংক, ব্লাড ডোনেশন, মেডিকেল ক্যাম্পসহ নানান কর্মকান্ড নিয়ে গত চার বছর ধরে কাজ করছে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার।
সম্প্রতি ঝীর্ণ-শীর্ণ পুরোনো পাঠাগার ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দা ঝিনা বড়ুয়া’র দানকৃত ১০ শতক জমিতে ১০৪০ বর্গফুটের দালান ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, যা দুতল বিশিষ্ট হবে বলে জানা যায়। সরজমিনে দেখা যায়, জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার ভবনের হাফ কলামের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকৌশলী উদয়ন বড়ুয়া জয়দ্বীপ বলেন, ভবনের কাজ সম্পন্ন করতে আনুমানিক ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভবনের নকশা করা হয়েছে।
জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার’র সভাপতি অসীম বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, আমার জানামতে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বে-সরকারি আধুনিক গণ-গ্রন্থাগার হবে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার। আজকাল শোনা যায়, কেউ বই পড়তে চায় না, তাই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীদের লাইব্রেরীকেন্দ্রীক করতে আমাদের এই প্রচেষ্টা।
ভিন্ন আঙ্গিকে প্রি-প্রাইমারি ও আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে ফ্রিল্যন্সিং এর প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাও আমাদের আছে।
হাজী এম.এ কালাম সরকারি কলেজের অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া বলেন, বই পড়া থেকে শিশু-কিশোররা যেভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সে কঠিন সময়ে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার শিশু-কিশোরদের আবার বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরির ক্ষেত্রে নব বিপ্লব ঘটাচ্ছে। রামুতে তাদের কাজ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। আমি এই ভেবেও কষ্ট পাই যে, টাকার অভাবে তাদের ভবনের পুনঃনির্মাণ কাজ এখনো শেষ হচ্ছেনা। এদেশে জ্ঞানের বাতিঘর লাইব্রেরী করতে কতো না টাকার অভাব।
জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করতে গিয়ে গত একবছর ধরে পাঠাগার’র কার্যক্রম কমে এসেছে, ভবনহীন হয়ে পড়ে আছি আমরা। গ্রামের সাধারণ মানুষদের গণচাঁদা ও বাৎসরিক অল্প সরকারি অনুদানে পাঠাগার’র কার্যক্রম চলে। বর্তমানে আমাদের যে ভবন পুনঃনির্মাণ প্রকল্প তা অত্যাধিক ব্যয়সাধ্য হওয়ায় নির্মাণ কাজ মুখ থুবডে পড়ার অবস্থা। সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।
জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার পুনঃনির্মাণে পাঠাগারনামীয় জনতা ব্যাংক রামু শাখার (০১০০১৩৯৭০৪৮১৩) নং সঞ্চয়ী হিসাব ও (০১৮৭৩-১৮৮১৩৮) এই নাম্বারে পারসোনাল বিকাশ, রকেট ও নগদ একাউন্টের মাধ্যমে অনুদান পাঠানো যাবে। সবাই প্রান্তিক গ্রামের বৃহৎ এই কর্মকান্ডে এগিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা পাঠাগার সংশ্লিষ্টদের।