সিবিকে ডেস্কঃ
‘ইফতারের পর হার্ট অ্যাটাক বাড়ছে’ বা ‘রমজানে হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাকের রোগী বেড়েছে’— এমন উক্তি গেল ক’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে! জানা-অজানা কম বেশি সকলেই এ সংক্রান্ত আরও কিছু লেখা যোগ করে শেয়ার করে অন্যকে সতর্কও করছেন! আসলেই কী— ইফতার পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ অথবা হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে?
এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে। তারা এ বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ইফতারের পর হার্ট অ্যাটাক এটি পুরোই গুজব। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ইফতারের পর রোগী বাড়ছে— এমন তথ্যও সঠিক নয়। কেননা, ইফতারের সঙ্গে হৃদরোগের কোন সম্পর্কই নেই। এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এর কোন ভিত্তি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।
তবে সতর্কও করেও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা হৃদরোগীদের জন্য উত্তম। এছাড়া নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম বা হাঁটাচলা করাটাও জরুরি। কেননা- রমজানে যে খাদ্যতালিকা থাকে, তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি হৃদরোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইফতারের পর হার্ট অ্যাটাক বাড়ছে’ বা ‘রমজানে হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাকের রোগী বেড়েছে’ এমন দীর্ঘ লেখা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে রোজাদার ও হৃদরোগীদের মধ্যে বেশ আতঙ্কও ছড়িয়েছে। তবে সেই লেখায় কখন? কীভাবে? কোথায়? কিংবা বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যাই কেউ লিখেন নি। চিকিৎসকরা বলছেন— এমন বিভ্রান্তকর তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে পেনিক সৃষ্টি হবে।
ফেসবুকে ভেসে বেড়ানো ‘লেখাটির’ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজোয়ান রেহান সিভয়েসকে বলেন, ‘ইফতারের পরে হার্ট অ্যাটাক বেড়েছে, এমন কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং রমজানে মানুষ আরও বেশি সুস্থ থাকে। তবে এটিও সত্য যে, রামজানে ইফতারে মানুষ ভাজাপোড়া জিনিস বেশি খেয়ে থাকে, তাছাড়া সেহরিতেও ডায়েট সঠিক রাখে না। তাই সেই দিকটি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয়।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘ হার্ট অ্যাটাক হয় সাধারণত হৃৎপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচল কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে। অথবা রক্ত চলাচলে কোথাও ব্লক হয়ে গেলে। কিন্তু এতে ইফতারের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যারা হার্টের রোগী তাদের কোন কিছুই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে— বুকে ব্যাথ্যা অনুভব হবে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হতে হবে।’
চিকিৎসকরা হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক উপসর্গ কি হবে সেটাও বলে দিয়েছেন—
বুকে ব্যথা, চাপ চাপ ব্যথা, বুকের এক পাশে বা পুরো বুক জুড়ে ভারী ব্যথা। শরীরের অন্য অংশে ব্যথা। মনে হতে পারে ব্যথা শরীরে এক অংশ থেকে অন্য অংশে চলে যাচ্ছে, যেমন হতে পারে বুক থেকে হাতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত বাম হাতে ব্যথা হয়, কিন্তু দুই হাতেই ব্যথা হতে পারে। মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা। ঘাম হওয়া। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা। বমি ভাব হওয়া। বুক ধড়ফড় করা বা বিনা কারণে অস্থির লাগা। সর্দি বা কাশি হওয়া। বেশিরভাগ সময় বুকে ব্যথা খুবই তীব্র হয়, ফলে শরীরের অন্য অংশে ব্যথা অনেকে টের পান না। আবার কারো ক্ষেত্রে হয়ত বুকে ব্যথা অনুভব করেননি, বিশেষ করে নারী, বয়স্ক মানুষ এবং যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, বুকে ব্যথা বা অজ্ঞান হয়ে যাবার মত ঘটনা সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগে হয়। কেন হয় হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক? আমাদের হৃদপিণ্ডে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তা হৃদযন্ত্রে আসে ধমনী দিয়ে। সেটি যখন সরু হয়ে যায়, তখন নালীর ভেতরে রক্ত জমাট বেধে যেতে পারে। ফলে নালীর ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায়, ফলে আর সে অক্সিজেন প্রবাহিত করতে পারে না। হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন প্রবাহিত না হতে পারলেই হার্ট অ্যাটাক হয়।
হার্ট অ্যাটাক হলে কী করণীয়?
এর উত্তরে চিকিৎসকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক হবার পর দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চিকিৎসা পেতে এক ঘণ্টা দেরির জন্য মৃত্যুর হার বেড়ে যায় ১০ শতাংশ। তাৎক্ষণিক-ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। হার্ট অ্যাটাকের পরপরই রোগীকে শক্ত জায়গায় হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে দিন এবং গায়ের জামা-কাপড় ঢিলেঢালা করে দিন। হার্ট অ্যাটাকের পর যদি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তার কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালুর চেষ্টা করুন। হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর যদি বমি আসে তাহলে তাকে একদিকে কাত করে দিন। যাতে সে সহজেই বমি করতে পারে। এতে ফুসফুসের মতো অঙ্গে বমি ঢুকে পড়া থেকে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ষা পাবেন।