* স্বাক্ষীর অভাবে আটকে আছে বিচার কার্যক্রম
* আসামীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ঘুরছে প্রকাশ্যে
* পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন পরিবারের
নিজস্ব প্রতিবেদক
৭ বছর পেরিয়ে গেলেও গতি নেই কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সদস্য পারভেজ হত্যা মামলার বিচার কাজ। সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে আছে বহুল আলোচিত মামলাটি। মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে একে অন্যের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, চলতি বছরেই শেষ হবে এ মামলার বিচারকাজ। কিন্তু মামলার আসামীরা রাজনীতিক ছত্রছায়ায় ঘুরছে প্রকাশ্যে। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পারভেজের পরিবার। টুরিস্ট পুলিশের সদস্য পারভেজ হত্যা মামলায় চার বছর আগে সাক্ষ্যগ্রহণের কথা থাকলেও তদন্ত প্রতিবেদন ও স্বাক্ষীর অভাবে আটকে আছে বিচার কার্যক্রম। এখনো এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহন হয়নি। স্বাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত বাদী কনস্টেবল রাজিব চাকমা ছাড়া কারো সাক্ষ্য গ্রহন হয়নি। এ মামলার দীর্ঘসূত্রতার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন পারভেজের পরিবার। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, চলতি বছরেই শেষ হবে এ মামলার বিচারকাজ। নিহত টুরিস্ট পুলিশের কনস্টেবল পারভেজ হত্যা মামলা আমি নিজ উদ্যোগে লড়ছি। কিন্তু স্বাক্ষীর অভাব ও তদন্ত কর্মকর্তাদের সময় নেওয়ার কারণে সময় লাগছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী। অচিরেই কক্সবাজার অতিরিক্ত দায়রাজজ আদলতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার রায় হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। জানা যায়, ২০১৫ সালে ২৩জুলাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাবণী পয়েন্ট ঝাউবনে এক পর্যটকের কাছ থেকে মালামাল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছিল ছিনতাইকারীরা। এইসময় সাদা পোশাকে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ ছিনতাইকারীদের ধরতে এগিয়ে গেলে পেছন থেকে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিক কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে ২ জনকে আটক করে। আটকৃতরা হলো— কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে আবু তাহের (২৮) ও শাহ আলমের ছেলে আবদুল মালেক (২৪)। পরবর্তীতে পুলিশ ৭ জনকে আসামী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এসব আসামী হলেন—ঘোনার পাড়া আবুল কালামের পুত্র মো. আবু তাহের, বাদশাঘোনা এলাকার শাহ আলমের পুত্র আবদুল মালেক, ঘোনার পাড়ার মৃত শামসুল আলমের পুত্র মো. শফিউল আলম, বড়কবর স্থান পাড়ার শাহ আলমের পুত্র খালেদ খোকন, মোহাজের পাড়ার আবদু শুক্কুরের পুত্র মামুন, দক্ষিণ ঘোনার পাড়ার নাজির হোসেন মিস্ত্রির পুত্র রশীদুল হাসান প্রকাশ গরু হাসান। তারমধ্যে একজন জেল হাজতে রয়েছে। পুলিশের দাবি আসামীরা পলাতক রয়েছে। কিন্তু আদালত সুত্রে জানা যায়, তারা জামিনে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের শীর্ষ অপরাধী রশীদুল হাসান প্রকাশ গরু হাসানের নেতৃত্বে কনস্টেবল পারভেজকে হত্যা করা হয়। বর্তমানে সে প্রকাশ্যে নানা অপরাধ করলেও ধরাছেঁায়ার বাইরে রয়েছে। কি বলছে ট্যুরিস্ট পুলিশ: এই বিষয়ে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, * ২য় পৃঃ ২ কঃ দেখুন
ইতোমধ্যে পারভেজ হত্যা মামলার বাদী কনস্টবল রনজিদ চাকমা সাক্ষ্য দেন। আমরাও আসামীদের আটকের চেষ্টা চালাচ্ছি।
ঝাউবনে এখনো সক্রিয় ছিনতাইকারীরা: পারভেজ হত্যার পরও এই মামলার শীর্ষ অপরাধীদের নেতৃত্বে লাবনী পয়েন্টের ঝাউবন এলাকাসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট। তাদের লালিত ছিনতাইকারীদের জন্য শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলেছে। যার ফলে স্থানীয় ও পর্যটকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে কক্সবাজার শহরে বড় ধরনের চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। নানা কৌশলে প্রায় অর্ধশত স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরের শীর্ষ অপরাধী রশীদুল হাসান প্রকাশ গরু হাসানের নেতৃত্বে ছিনতাইকারী চক্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের শীর্ষ অপরাধী রশীদুল হাসান প্রকাশ গরু হাসানের নেতৃত্বে পর্যটন শহর কক্সবাজার, হোটেল—মোটেল জোন ও সমুদ্র সৈকতে অন্তত শতাধিক পেশাদার ছিনতাইকারী ও ছিনতাই চক্রের টমটম পার্টি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শহরের দুর্গম এলাকায় আস্তানা গড়ে শহরজুড়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে এই চক্রটি। বিশেষ করে কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া, মোহাজেরপাড়া, বাসটার্মিনাল এলাকা, বাদশাঘোনা, হালিমা পাড়া, সমিতি পাড়া, সার্কিট হাউস এলাকা, হোটেল মোটেল জোন, লাইটহাউস পাড়া, সাহিত্যিকা পল্লী, পাহাড়তলী, দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া, পেশকারপাড়া ও কলাতলী আদর্শ গ্রাম কেন্দ্রিক বেশ ক’টি ছিনতাইকারী চক্র বিভিন্ন আশ্রয়—প্রশ্রয়ে সক্রিয় রয়েছে। ছিনতাইকারী দলে দলে বিভক্ত হয়ে সমুদ্র সৈকতসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার নির্জন স্থানে ছিনতাই করে থাকে। বিশেষ করে ভোরে ও রাতে এরা তৎপর থাকে সবচেয়ে বেশি। আবার পর্যটন মৌসুমে এরা শহরের সমুদ্র সৈকত, ডায়াবেটিকস পয়েন্ট ও ঝাউবাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ওৎ পেতে থাকে। অন্য সময় এরা বৃহত্তর পাহাড়তলী, হোটেল মোটেল জোন, রুমালিয়ারছড়া ও ঘোনারপাড়ায় পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে থাকে। কেউ বাধা দিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে। এসবের মূলে পারভেজ হত্যা মামলার আসামীরাই। তাদের রাজনীতিকভাবে আশ্রয় দিচ্ছে এক কতিপয় নেতা।
কি বলছে সচেতন মহল : কক্সবাজার শহরবাসী বলছেন, যেখানে পুলিশ সদস্য পারভেজ হত্যার পরেও ছিনতাইকারী প্রতিরোধ হয়নি, সেখানে আমাদের জানমালের নিরাপত্তা কোথায়।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইকারীদের হাতে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ৭ বছর ধরে বিচার কাজ ঝুলে আছে, সেখানে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে ভুক্তভোগীরা বিচার চাওয়া দুঃস্বপ্নের মতো। নজরদারি করার পাশাপাশি বিচারের সঠিক প্রয়োগ না হলে অপরাধীরা নানা অপরাধে উৎসাহিত হবে। পুলিশ সদস্য পারভেজ হত্যায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত সময়ে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে পর্যটন শহরে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি বলছে : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শহরের দাগি ও চিহ্নিত অপরাধীদের আটক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পারভেজ হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরলে আইনের আওতায় আনা হবে শিগগিরই।