এম.এ আজিজ রাসেল:
উৎসব মূখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুগোর্ৎসব। বুধবার (০৫ অক্টোবর) বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে সম্প্রীতির বন্ধনে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। এসময় শ্রদ্ধা ভালোবাসায় মাতৃবিদায়ের বিষাদপূর্ণ অশ্রু অঞ্জলির মাধ্যমে সাগরের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা।
প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সৈকতের বালিয়াড়িতে সব ধর্মের মানুষের সরব পদচারণায় তৈরি হয় সম্প্রীতির সেতুবন্ধন। আর এ বন্ধনে সকলেই এক সুরে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার।
বুধবার (০৫ অক্টোবর) দুপুরে শহরের বার্মিজ মার্কেট থেকে প্রতিমা শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি সৈকতের লাবণী পয়েন্টে এসে বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানে মিলিত হয়। গাড়ি থেকে নামানোর পর আরতি ও আরাধনা শেষেই বিসর্জন দেয়া হয় স্ব স্ব মন্ডপের প্রতিমা। এসময় ঢোলের তালে তালে ‘মা দুর্গা কি জয়’ শ্লোগানে মুখরিত ছিল সমুদ্র পাড়। এসময় ভক্তদের নাচে—গানে সৃষ্টি হয় আনন্দঘন পরিবেশ। প্রতিমা বিসর্জন অবলোকনে সৈকতের বালিয়াড়িতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি দুপুর থেকে আসতে থাকে নানা ধর্মের মানুষ। তাদের সাথে যোগ দেয় পর্যটকেরাও।
বিসর্জন ঘিরে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। আয়োজকেরা জানান, সৈকতের এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
বিজয়া মঞ্চে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল করের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের সঞ্চালনায় বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃরূপে দেশের সকল মানুষকে আগলে রেখেছে। দুর্গাপূজা আসলে একটি চক্র সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোর চেষ্টা করে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এই দেশের কোন মানুষকে দেশ ছাড়তে হবে না। এই অশুভ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। মনে রাখতে হবে অশুভ শক্তির বিনাশ ও সত্যের আরাধনাই দুর্গোৎসবের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ শান্তি সম্প্রীতির দেশ। একথা প্রমাণ করে প্রতিমা বিসর্জন উৎসবকে ঘিরে মানুষের সম্প্রীতি আর উচ্ছ্বাসের ঢেউ।’
এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মো. মো. মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, র্যাব—১৫ এর অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রনজিত দাশ, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল শর্মা ও কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা সুরঞ্জিত বড়ুয়া লাভু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ—সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু, রতন দাশ, দীপক শর্মা দিপু, দীপ্তি শর্মা, শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন দাশ, সাধারণ সম্পাদক জনি ধরসহ বিভিন্ন উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।