‘বাঁশ’ শব্দটি আমরা রোজ একে অপরকে মজা করার ছলে সবচেয়ে ব্যবহার করে থাকি। আমাদের জীবনে অনাকঙ্খিত কোনো দুর্ঘটনা বা ঘটনা ঘটলে আমরা অজান্তেই বলে ফেলি ‘বাঁশ’ খাইলাম। তবে সেই খাওয়া মানে মুখে চিবিয়ে খাওয়াকে বুঝায়না। অথচ আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঁশ খুবই সুস্বাদু একটি খাবার।
‘বাঁশ কোড়ল’ মূলত বাঁশ গোড়ার কচি অংশকে বোঝায় যা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। প্রাচ্যের রন্ধন শিল্পে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীদের ভোজন তালিকায় এর বিশেষ স্থান রয়েছে। বাঁশ কোড়ল মারমাদের কাছে মহ্ই, চাকমাদের কাছে বাচ্ছুরি, আর ত্রিপুরাদের কাছে মেওয়া নামে পরিচিত।

স্থানীয় উপায়ে রান্না করা বাঁশ কোড়ল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন শরীরের জন্যও উপকারী। দৈহিক সুস্থতায় বাঁশ বেশ উপকারী। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি মেলাতে এর কার্যকারিতা অপরিসীম। আর তাইতো এই বাঁশের কোড়লকে চীনারা বলে থাকেন ‘স্বাস্থ্যকর খাবারের রাজা’।
তাজা বাঁশের কোঁড়লে ৮৮-৯৩% পানি, ১.৫-৪% প্রোটিন, ০.২৫-০.৯৫% চর্বি, ০.৭৮-৫.৮৬% চিনি, ০.৬০-১.৩৪% সেলুলোজ এবং ১.১% খনিজ পদার্থ আছে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনও বিদ্যমান।

বাঁশের যত পুষ্টিগুণ—
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
বাঁশের কোড়লে রয়েছে উপকারী সব উপাদান যা দেহের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রক্তচাপ রাখে নিয়ন্ত্রণে
দেহের রক্তচাপের মাত্রা কমায় এটি। যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী একটি খাবার হলো বাঁশ কোড়ল। এটি ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
হজমজনিত সমস্যা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন? খাবার তালিকায় রাখুন বাঁশ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দারুণ কার্যকর।
নানা রোগের নিরাময়
হাঁপানি, ডায়াবেটিস, তীব্র জ্বর, মূর্ছা যাওয়া, মৃগী রোগ ইত্যাদি নিরাময়ে যথেষ্ট উপকার করে বাঁশ।
উল্লেখ্য, সদ্য অঙ্কুরিত কচি বাঁশকে বলা হয় বাঁশ কোড়ল। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকাগুলোতে এটি খাওয়া হয় বেশি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের মেঘালয়, আসাম, হিমালয় অঞ্চলে, নেপাল, ভুটান, কোরিয়া, চিন, জাপানেও বেশ জনপ্রিয় এই বাঁশ কোড়ল।