দফায় দফায় বাজারে বাড়ছে চিনির দাম। সরকার নির্ধারিত দর ৯০ টাকার চিনি খোলাবাজারে এখন কেজি ১১৫ টাকা। পনেরো দিন আগেও কেজি প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর আগে বাজারে কেজিপ্রতি চিনি বিক্রি হতো ৯০-১১০ টাকায়। অন্যদিকে বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে ৯৫ টাকার প্যাকেট চিনি।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে বস্তাপ্রতি ৩শ’ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৪শ টাকায়। এর আগে খাতুনগঞ্জে প্রতি বস্তা চিনির দাম ছিলো ৫ হাজার ১শ টাকা। সে সময় খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হতো ১০২ টাকায়।
এরও আগে গত ১৬ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিনি ৪ হাজার ২শ থেকে ৪ হাজার ৩শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সে সময় পাাইকারিতে কেজিপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। সাতদিনের ব্যবধানে বস্তার চিনিতে বাড়ে ৬শ’ টাকা। গত ২৩ অক্টোবর পাইকারিতে প্রতিবস্তা চিনি ৪ হাজার ৮শ থেকে ৪ হাজার ৯শ টাকায় বিক্রি হয়। সে সময় পাইকারিতে কেজি প্রতি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে বেশি পরিমাণে চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন প্রতি মেট্রিকটন চিনি ৭৪ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা করেছে। রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলা অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ করে। কিন্তু ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে অপরিশাধিত চিনি আমদানি কমে গেছে। এ কারণে বাজারে চিনির সরবরাহও কমায় দাম বেড়ে গেছে।
খাতুনগঞ্জর পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী মো. ফখরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, মিলাররা বাজারে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। আমাদের বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দরে। চলতি মাসের শুরুতে আমরা পাইকারিতে প্রতিকেজি চিনি ১০২ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ বিক্রি করছি ১০৮ টাকায়। বাজারে চিনির সরবরাহ কম। তাই দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়েছে চিনির। দুমাস আগেও খুচরায় প্রতিকেজি চিনি ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতমাসে ১১০ টাকা করে বিক্রি হলেও বর্তমানে খুচরায় প্রতিকেজি চিনি ১১৫ টাকাায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরের ঈদগা এলাকার আল আমিন স্টোরের মালিক মো. নাসির সিভয়সকে বলেন, পাইকারদের কাছ থেকে ১০৮ টাকা দরে চিনি কিনতে হচ্ছে। তার উপর পরিবহন খরচ, শ্রমিকের মজুরি, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল তো আছেই। ১১৫ টাকায় বিক্রি না করত পারলে আমাদের লাকসান হবে। ডিলাররা প্যাকেট চিনির অর্ডার নিচ্ছেন না। তাই দোকানে প্যাকেট চিনি নেই।
চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। নগরের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে কথা হয় স্কুল শিক্ষক মো. ইসতিয়াকের সাথে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়ছে না। সরকার চিনির দর বেধে দিয়েছিল ৯০ টাকায়। অথচ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। উল্টো আরও দাম বাড়ার কথা বলছেন বিক্রেতারা। সংসার খরচ ১০ হাজার টাকার উপরে বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ না খেয়ে মরবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান সিভয়েসক বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেই চিনির দাম বাড়ান। আগেও অভিযান পরিচালনাকালে আমরা এমনটা দেখেছি। আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা করবো। সেখানে চিনির সাপ্লাই চেইন ঠিক আছে কিনা তা আবারো খতিয়ে দেখবো।
কনজ্যুমার এসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসাায়ীরা চিনিতে কারসাজি করছেন। তারা দোকানে মূল্য তালিকায় চিনির দর না লিখে ইচ্ছামত দাম আদায় করছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরাও কারসাজিতে মেতে উঠেছেন। খোলা চিনির দাম বাড়ায় তারা প্যাকেট চিনি খোলা বিক্রি করছেন। কাজেই মিলগেট থেকে খুচরা সব পর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে।