লবণ উৎপাদনে মহেশখালী এবার পিছিয়ে!

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী: 
লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছরে মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদন করেছে কুতুবদিয়ার লবণ চাষীরা। পাশাপাশি জেলার মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, সদর উপজেলা, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতেও লবণ চাষের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আবার অনেকের প্রস্তুতি শেষের পথে জানান বিসিক, কক্সবাজার অফিস।
বিসিক মহেশখালীর গোরকঘাটা অফিস সূত্র মতে, জেলায় সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয় মহেশখালীতে (গত বছর লাখ ৪৬ হাজার ৭শ মে.টন) অথচ লবণ উৎপাদনে মাঠের কার্যক্রমে পিছিয়ে। কারণ অনুসন্ধানে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও ঘোনার (মাছের ঘের) মালিকরা ঘোনা ছেড়ে না দেওয়ায় চাষীদের সকল প্রস্তুতি থাকলেও মাঠে লবণ চাষে যেতে পারছেনা। আবার অনেক ঘোনাতে মাঠ প্রস্তুত করছে চাষীরা প্রাথমিক পর্যায়ে।
মাতারবাড়ি, উত্তরনলবিলা, বড় মহেশখালী, ঘটিভাঙ্গা, কালারমারছড়ার অনেক লবণ ব্যবসায়ী ও বর্গা লবণ চাষীরা জানান, যেহেতু আবহাওয়ার ভালো অবস্থা আর স্বস্তিদায়ক দাম দুটোই মিলে যদি আগে মাঠে নেমে লবণ উৎপাদন করতে পারা যেত তাহলে শেষের মৌসুম নিয়ে চিন্তা থাকতনা। এই আশা ও দুশ্চিন্তা কাজ করছে বিশেষভাবে বর্গা চাষীদের মাঝে। তাদের অনেকই মনে করেন মতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
জানা যায়, এখনো লবণের মৌসুম শুরু হতে আরো পনের বিশ দিন বাকি আছে যারা মাঠে নামছে তারা মূলত আগে ভাগেই নামছে। তাতে ঘোনার মালিকদের কোনো দোষ নাই। তিনি নিজেও একজন লবণ চাষী পরিচয় দিয়ে আশা করে বলেন এবছরে লবণের উৎপাদনে জন্য সময়ের কোন সমস্যা হবেনা। দামটা ন্যায্য এবং স্থির থাকলেই হবে।
মাতারবাড়ির বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, মাতারবাড়িতে ফার্ম ঘোনা, কানকাটি ঘোনা, ধোনার ঘোনা, করুলিয়া ঘোনায় মাঠে চাষীরা কাজ করছে কিছু দিনের মধ্যে লবণ উৎপাদন করতে পারবে আশা তার।
বিসিক কুতুবদিয়া অফিসের সমন্বয়ক জাকির হোসেন বলেন, কুতুবদিয়ায় প্রায় ১০ দিন থেকে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। মূলত বিসিক এখানে চাষীদের উৎসাহ দিয়েছে। আর আবহাওয়া ও দাম ভালো থাকায় লবণ চাষীরাও মাঠে নেমে তাদের কাঙ্খিত সাফল্য পেয়েছে।
লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) কক্সবাজারের পরিদর্শন (উন্নয়ন) মো. ইদ্রিস আলী বলেন, লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে তেমন সমস্যা হবে না, যদি কোনো বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুযোর্গের সম্মুখিন না হন। কারণ কুতুবদিয়ায় এখন যে লবণ উৎপাদন হচ্ছে তা ভালো মৌসুমের অগ্রিম পরিকল্পনার ফল। মূল মৌসুম সামনে থেকে শুরু হবে।
তিনি আরো জানান, ভালো আবহাওয়ার কারণে মূলত আগাম উৎপাদন করতে পারছে কিছু কিছু উপজেলায়। সাধারণত নভেম্বর—ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় লবণ উৎপাদন। গত মৌসুমে প্রথম লবণ উৎপাদন হয়েছিল নভেম্বরের ১৮ তারিখ।
বাংলাদেশ লবণ চাষী বাঁচাও পরিষদের আহবায়ক ও মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজেদুল করিম বলেন, মহেশখালীর লবণ চাষীরা আগে ভাগে লবণ মাঠে যেতে পারলে প্রাথমিক যে সুবিধা আর দাম পেত তা মহেশখালীর লবণ চাষীরা বঞ্চিত হয়েছে। তবুও তিনি আশাবাদী সামনের সময়ে সুদিন থাকবে লবণ চাষীরা তাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে।
লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) কক্সবাজারের উপ—মহাব্যবস্থাপক মোঃ জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, আমরা মহেশখালীতে লবণ উৎপাদনে চাষীরা যাতে আগে নামে তার জন্য মতবিনিময় সভা করেছি, এবছরে দাম আর আবহাওয়া ভালো থাকায় লবণ চাষীদের আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। তাই সার্বিক বিষয়ে দেখে আশা রাখছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লবণ উৎপাদন আরো বেশি হবে।
উল্লেখ্য, কুতুবদিয়ার লেমশীখালী, মহেশখালীতে উত্তর নলবিলা, মাতারবাড়ি, গোরকঘাটা, ঈদগাঁও’র গোমাতলী, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী, চকরিয়াতে দরবেশকাটা, ফুলছড়ি, ডুলাহাজার, টেকনাফ উপজেলায় লবণ কেন্দ্রের মাধ্যমে লবণ উৎপাদনে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বিসিক, কক্সবাজার। এছাড়া বাঁশখালীর পূব বড়ঘোনা, সরল লবণ কেন্দ্র রয়েছে।
বিসিক জানায়, গত বছর মহেশখালীতে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০, কুতুবদিয়ায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ, ঈদগাঁওতে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭০০, সদর ৮৩ হাজার ৬ শত ৯০, পেকুয়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০, চকরিয়ায় ২ লাখ ৫৮ হাজার ১০০, টেকনাফ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ মে.টন লবণ উৎপাদন হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮ শত ৬০ মে.টন লবণ উৎপাদিত হয়।
  •  
  •  
  •  
  •  
  •