দেশপ্রেমের উজ্জীবন ও বিজয় উদযাপনে ইসলামের সুমহান শিক্ষা

হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর:

মাতৃভূমি তথা স্বদেশের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশপ্রেমের উজ্জীবন ও বিজয় উদযাপনেও শাশ্বত, চিরন্তন, পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। বিশ্বমানবতার মুক্তির পথ দিশারী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ স. নিজের মাতৃভূমি মক্কাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন। এমনকি কাফিরদের কঠিন ষড়যন্ত্রের কারণে এবং আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে মদিনায় হিজরত করলেও জন্মভূমি মক্কার প্রতি রাসুলে কারীম স. এর ভালোবাসা ছিলো অকৃত্রিম, অবারিত। তাই তো তিনি হিজরতকালে বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে কোমল কণ্ঠে বলছিলেন, “হে আমার দেশ তুমি কতো সুন্দর! আমি তোমাকে কতোই ভালোবাসি। তোমার অধিবাসীরা যদি ষড়যন্ত্র না করত, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।”
রাসুলে কারীম স. মক্কা থেকে মদীনা হিজরত করার পর ‘মদীনা সনদ’ প্রণয়নের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন তা কল্যাণরাষ্ট্রের অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বিশ্ব ইতিহাসের সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান এবং শান্তি-সম্প্রীতির ঐতিহাসিক দলিল মদীনা সনদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ সব ধর্ম,বর্ণের নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রদান সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ধারা সন্নিবেশিত রয়েছে। যেমন “সনদে স্বাক্ষরকারী সকল গোত্র-সম্প্রদায় ‘মদীনা রাষ্ট্রে’ সমান অধিকার ভোগ করবে, সকল ধর্মসম্প্রদায়ের স্ব-স্ব ধর্ম-কর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার যথারীতি বহাল থাকবে; কেউ কারও ওপর কোনরূপ আক্রমণ করবে না, সন্ধিভুক্ত কোন সম্প্রদায় বহিঃশত্রুকর্তৃক আক্রান্ত হলে উক্ত আক্রান্ত সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা করতে হবে এবং শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে, কোন নাগরিক কোন অপরাধ করলে তা তার ব্যক্তিগত অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।”- (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত)। এভাবে ঐতিহাসিক মদীনা সনদের মাধ্যমে শান্তির বার্তাবাহক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ স. ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সাম্য-মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন রচনা করে আদর্শ কল্যাণরাষ্ট্রের অদ্বিতীয় নজির স্থাপন করেন। তিনি নিজ হাতে গড়া রাষ্ট্র মদীনাকে স্বদেশ হিসেবে অকৃত্রিম ভালোবাসতেন। এমনকি মদীনার উহুদ পাহাড়কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “নিশ্চয় উহুদ এমন এক পাহাড় যেটি আমাদের ভালোবাসে আর আমরাও তাকে ভালোবাসি।”-( মুসলিম)।
রাসুলে কারীম স. মক্কা বিজয়ের প্রেক্ষিতে ক্ষমাশীলতা ও উদারতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তাও নিজ মাতৃভূমি ও তার নাগরিকদের প্রতি ভালোবাসা ও পবিত্রতামুখর বিজয় উদযাপনের অপূর্ব নমুনা হিসেবে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। মক্কার কাফিরদের অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নে প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ করলেও পরবর্তীতে আল্লাহ তা’আলার অপার মেহেরবানীতে তিনি বিনা রক্তপাতে সে মক্কা বিজয় করেছিলেন। সে ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের পর রহমতের নবী হযরত মুহাম্মদ স. ঘোষণা করেছিলেন, “হে মক্কাবাসী! আজ আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে সে কথাই বলছি যে কথা হযরত ইউসুফ আ. নিজ ভাইদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৯২)।
ইসলামের এই সুমহান শিক্ষা ও মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ স. এর চিরন্তন, শাশ্বত আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়া এবং স্বদেশের সামগ্রিক কল্যাণে আত্মিনবেদন করা সুনাগরিকের কর্তব্য। সেই সাথে মাতৃভূমির মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয় উদযাপনেও রাসুলে কারীম স. এর সুমহান আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয়।

লেখক-

খতীব-
শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট জামে মসজিদ, কক্সবাজার।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক-
কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •