মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী:
কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্তবর্তী লেদা গ্রামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও সাতজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আহতদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত শরণার্থী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের উন্নত চিকিৎসা জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
বুধবার (২ আগস্ট) দুপুর একটার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকায় বিজিবির তল্লাশি চৌকিতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের নাম মো. রফিক (৩২)। তিনি লেদা ২৪ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক/১৩ এর সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
আহতরা হলেন, হ্নীলার ৮নং ওয়ার্ডের লেদার জালাল আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম রাজু, একই এলাকার নুর হোছনের ছেলে মো. ইসমাঈল, মো. উসমান, হ্নীলার ৯নং ওয়ার্ডের জাদিমুড়া এলাকার নজির আহমদের ছেলে টমটম চালক ওসমান। বাকিদের নাম এখনো পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় যুবক ফাহাদের অভিযোগ, তার দুলা ভাই জাফর আলম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি গতকাল বাড়ি ফিরেছেন। আজ বেলা ১২ টার দিকে জাফর ইনজেকশন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে লেদা যাওয়ার পথে শুনতে পান তার ভাই রবিউল আলমকে বিজিবি সদস্যরা আটক করে মারধর করছেন। কেন তাকে মারধর করছেন জানতে তিনি সেখানে গেলে রবিউলকে ছেড়ে দিয়ে তাকে বেদড়ক পেটান বিজিবি সদস্যরা। এসময় জাফর আলমের প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে কেন তাকে আটক করা হয় তা জানতে চান। একপর্যায়ে ঘটনাটি বাকবিতণ্ডায় রূপ নেয়। পরে স্থানীয় জনতা জড়ো হলে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। পরে বিজিবি সদস্যরা তাদের লক্ষ করে উপর্যুপরি গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়। গুলিবৃদ্ধ হন বেশ কয়েকজন।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, বিপুল ইয়াবাসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জাফর আলম নামে এক ইয়াবা কারবারিকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে গেলে বিজিবির ওপর হামলা, গুলি ও পাল্টা গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হতাহত রয়েছে। বিষয়টি বিস্তারিত পরে গণমাধ্যমে জানানো হবে।’
ব্যাক্তিগত কাজে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন জানিয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘শুনেছি লেদা এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমের ভাই জাফর আলমের বাড়িতে বিজিবির একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিসহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা বিজিবির ওপর হামলা চালায়। বিজিবিও পাল্টা গুলি করে। এ ঘটনায় একজন নিহতসহ সাতজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’
এ ঘটনা শুনেছেন জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর শুনেছি। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে হচ্ছে।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিড়িওতে দেখা যায়, গুলিবৃদ্ধ হয়ে রাস্তায় বৃদ্ধসহ কয়েকজন পড়ে রয়েছেন। পাশের একটি মসজিদের ভেতরেও রক্তের দাগ দেখা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিজিবি সদস্যরা পাশের মসজিদের ভেতরে গিয়েও গুলি ছুঁড়ে।