রামু প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের রামুতে ভুতুড়ে, মনগড়া বিল নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিভিন্নস্থানে গ্রাহকদের নানাভাবে হয়রানি করে অর্থ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। ভুতুড়ে বিল দেয়ার ঘটনায় আবাসিক প্রকৌশীর কাছে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন এক গ্রাহক। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আবাসিক প্রকৌশলী ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ওই গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে মিটার পরিবর্তন এবং গৃহকর্তা ও স্কুল পড়ুয়া দুই কন্যাকে জনসমক্ষে মারধর ও লাঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রামু বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সীমাহীন দূর্ণীতি, অবহেলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা সওদাগর পাড়া এলাকার শফিকুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন- মনগড়া বিদ্যুৎ বিল দেয়ার ঘটনায় তিনি আইনী প্রতিকার চেয়ে গত ২০ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে রামু বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলীর কাছে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু আবাসিক প্রকৌশলী এ লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ভাড়াটে লোকজন নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর বিকালে উখিয়ারঘোনা সওদাগর পাড়াস্থ তার (সাইফুল) বাড়িতে গিয়ে হাকাবকা শুরু করেন। এসময় তিনি এবং তার স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। ওইসময় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তার মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ২ মেয়েকে নানাভাবে হাকাবকা শুরু করে বাড়ির মিটার খুলে নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে মেয়ে দুটি তাদের বাবা-মাকে ফোন করে বাড়িতে আনেন। এসময় মেয়েদের সামনে তাকে (সাইফুল ইসলাম) মারধরে করে মাটিতে ফেলে দেয় এবং এক পর্যায়ে তাকে বেধে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে মেয়ে দুটি বাবাকে জড়িয়ে ধরে। ওইসময় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তার দুই মেয়ে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।
সাইফুল ইসলামের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া অর্পা মাহি ও জেসমিন আকতার জানিয়েছে, বিদ্যুৎ অফিস থেকে বিপুল সংখ্যক লোকজন এসে মিটার খোলা শুরু করে। এসময় তারা দুই বোন না খোলার অনুরোধ জানালে তাদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং হুমকী-ধমকি দেয়। পরে তিনি (মারিয়া) পাশর্^বর্তী দোকানে গিয়ে মোবাইল ফোনে কল করে বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে। এসময় তার বাবাকেও হুমকি-ধমকি ও মারধর শুরু করে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। মিটার নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্ড মিটার না লাগানোর অনুরোধ করলে তার বাবাকে তারা গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় দুইবোন কান্নাকাটির এক পর্যায়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন আবারও তাদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। বিদ্যুৎ অফিস থেকে প্রায় ২০ জনের অধিক লোকজন এসেছিলো। এরমধ্যে পরিচয়পত্র দেখে কয়েকজনকে তারা চিনতে পেরেছে। এরা হলো- নজরুল, হাসান আলী, নুরুল আমিন, মোতালেব ও রাশেদ।
বিদ্যুৎ গ্রাহক সাইফুল ইসলাম আরও জানান- ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে তিনি বিদ্যুতের গ্রাহক হয়েছেন। বিগত নভেম্বর মাস পর্যন্ত তার কোন বিল বকেয়া নেই। বেশ কিছুদিন ধরে মিটার না দেখে তাকে বিল দেয়া শুরু করে। বিষয়টি তিনি বিদ্যুৎ অফিসকে জানালেও কেউ কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর থেকে ২৬ নভেম্বর সময়কালীন ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল পেয়ে হতভম্ব হয়ে যান তিনি। ওই বিলে ৬ হাজার ৬৭০ ইউনিট ব্যবহার দেখিয়ে বিল দেয়া হয় ৮৯ হাজার ৭১৮ টাকার। অতীতের চেয়ে এতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৫ টাকা করে। মিটার না দেখে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে টাকা আত্মসাতের প্রতিকার চেয়ে তিনি ২০ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে রামু বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলীর কাছে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু আবাসিক প্রকৌশলী এ লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে আইনী কোন জবাব না দিয়ে উল্টো চরম ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যুৎ অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভাড়াটে লোকজন নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে এবং তার স্কুল পড়ুয়া ২ মেয়েকে মারধর, লাঞ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি আইনী ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
সাইফুল ইসলামের স্ত্রী কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য আনার কলি জানিয়েছেন- ঘটনায় সময় তিনি কক্সবাজার ছিলেন। তার স্বামী বাড়ির বাইরে ছিলো। ওইসময় বিদ্যুৎ অফিস থেকে ২০/৪০ জন লোক এসে তার বাড়ির মিটার খুলে নিতে শুরু করে। এসময় তাদের মিটার না খোলার অনুরোধ জানালে তারা তার দুই মেয়েকে লাঞ্চিত করেছে। পরে আমার স্বামী এলে তাকেও মারধর ও লাঞ্চিত করে। একজন জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্বেও আমার বাড়িতে আমাদের অনুপস্থিতিতে এভাবে তান্ডব চালানোর ঘটনায় আমি নিজেও হতবাক ও মর্মাহত হয়েছি।
রামু বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরী জানিয়েছেন- সাইফুল ইসলাম ও তার মেয়েদের মারধর বা ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি সাজানো। বরং সাইফুল ইসলাম বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারী নজরুলকে র্দীঘক্ষণ টেনেহেঁচড়ে মিটার লাগাতে বাঁধা প্রদান করেন। তিনি আরও জানান- মোটা অংকের যে বিলটি সাইফুল ইসলামকে দেয়া হয়েছে, তা আমরা সমন্বয় করে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেবো। কিন্তু তিনি সরকারি কাজে বিভিন্ন সময়ে বাঁধা দিয়েছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়াও মিটার না দেখে বিল করার বিষয়ে জানতে চাইলে গৌতম চৌধুরী বলেন- সাইফুল ইসলাম মিটার রিডারকে কম ইউনিটের বিল দেয়ার জন্য বলতো। তাই সংশ্লিষ্ট রিডার কম বিল করতেন। যে কারণে মোটা অংকের বিল জমে গেছে। কক্সবাজার জেলা প্রকৌশলীও বিলটি সমন্বয় করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
উখিয়ারঘোনা গ্রামের আরও একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন- বিদ্যুৎ অফিসের দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের হাতে প্রতিনিয়ত লোকজন হয়রানির শিকার হচ্ছে। রামুর উখিয়ারঘোনা একটি অজপাড়া গাঁ। যেখানে ৫০০ ইউনিটের বেশী বিদ্যুৎ ব্যবহার সম্ভব না। কিন্তু এভাবে মিটার না দেখে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল দিয়ে সাইফুল ইসলামের মতো অসংখ্য গ্রাহককে চরমভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি কার্ড মিটার লাগানোর নামেও গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ আদায় করছে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন।