রামু সরকারি কলেজ: এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের মোবাইল বন্ধের নির্দেশনা ও নাস্তার বিপরীতে নগদ টাকা দেওয়ার ঘোষনায় নতুন বিতর্ক

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

গত বছর জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বিল করে সেই বিতর্কের শেষ হতে না হতেই এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম।

আলোচনা অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সকল শিক্ষকদের মোবাইল ফোন বন্ধ করার নির্দেশনা এবং অংশগ্রহকারী শিক্ষক কর্মচারীদের নাস্তা না দিয়ে বিপরীতে নগদ টাকা বিলির ঘোষনায় শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্ঠি হয়েছে।

জাতীর পিতার অনুষ্ঠান চলাকাল মোবাইল বন্ধ রাখা এবং একটি সরকারি কলেজের শিক্ষকদের নাস্তা না দিয়ে নগদ টাকা দেওয়ার এমন সিদ্বান্তে অধ্যক্ষের রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন কলেজটির শিক্ষকেরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক জানান, সকাল ১০ টার দিকে শিক্ষক মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই অধ্যক্ষ সবার মোবাইল ফোন বন্ধ করে ভেতরে ঢুকানোর নির্দেশনা দেন। যুক্তি হিসাবে তুলে ধরেন, গত ১১ মার্চ একজন শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী কেলেংকারীর ঘটনার প্রেক্ষিতে ডাকা সভার অডিও রেকর্ড ও ভিডিও বাইরে ফাঁস হয়েছে। এ জন্য উপরের ( উর্দ্ধত্মন কর্তৃপক্ষ) নির্দেশনা আছে মোবাইল বন্ধ রাখার। এমন আচরণে সিনিয়র শিক্ষকেরা চরম অপমান বোধ করেন।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে এমনকি গোপন বিষয় আছে, যা বাইরে প্রকাশ হলে কলেজের বা অধ্যক্ষের সমস্যা হবে, বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়।

পবিত্র রমজান মাস হওয়াতে নাস্তার ব্যবস্থা রাখা হয়নি এতে অপরাধের কিছু নেই। কিন্তু একটি সরকারি কলেজের শিক্ষকদের নাস্তার বিপরীতে নগদ টাকা দেওয়ার এ বিষয়টি অধ্যক্ষের রুচিতে কিভাবে আসে। মূলত এ অনুষ্ঠানে মূলত মোটা অংকের খরচ দেখিয়ে,মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্য অরুচিকর এমন সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষকেরা।

এক সিনিয়র শিক্ষক জানান, গত ছয়মাস ধরে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম দুর্নীতি, নিজের শিক্ষককে নাম ধরে ডাকা, শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নিজের টেবিলের সামনে থেকে চেয়ার সরিয়ে ফেলা নানা বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর শিক্ষা মন্ত্রনালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, দুদক তদন্ত কাজ শেষ করলেও একটিরও প্রতিবেদন জমা হয়নি। যে কারণে এখনো অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়গুলে ঝুলে আছে। যে কারণে অধ্যক্ষ খুব আতংকে রয়েছেন। তাই নিজের দোষ ঢাকতে কোনটি সঠিক কোনটি বেঠিক অধ্যক্ষ বুঝতে পারছেনা। ফলে পদে পদে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত গত বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসেন অনুষ্ঠানে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষক কর্মচারিকে খাসির মাংস ও ডিম একবেলা খাবার দিয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকার বিল করেন। সেখানে ৪ ফুট ৮ ফুট একটি ব্যানারের দাম দেখানো হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। বিষয়টি গনমাধ্যমে প্রকাশ হলে পরে বাধ্য হয়ে সেই বাজেট থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে ফেরত পাঠানো হয়। বিষয়টি তখন জেলাজুড়ে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম জানান, ১৭ মার্চ জাতীর পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের জন্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমম জহিরকে প্রধান করে
কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এ অনুষ্ঠানের সব
বিষয় এ কমিটি দেখভাল করছে। বিষয়টি তারাই জানবেন।

তবে বিষয়টি স্বীকার করে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও রামু সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমম জহির বলেন,পবিত্র রমজান মাস হওয়াতে অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিলনা। তবে অধ্যক্ষের পরামর্শক্রমে আপ্যায়ন বাবদ উপস্থিত শিক্ষকদের ২৫০ টাকা আর কর্মচারিদের ১৮০ টাকা দেওয়ার সিদ্বান্ত হয়েছে। তবে আজ কোনো টাকা বিতরণ হয়নি।

এছাড়াও দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানায় ইফতার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •