কিস্তি দিতে বিলম্ব হলে অফিসে ডেকে এনে সদস্যদের শা*রি*রী*ক নি*র্যা*ত*ন চালান ব্যবস্থাপক আমিনুল

 

*নারী কর্মীদের সাথে ইঙ্গিতপূর্ণ ও অশোভন আচরণ করেন ব্যবস্থাপক আমিনুল

 

হাসান তারেক মুকিম,রামু

কক্সবাজারের রামুতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আমিনুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে শনিবার(১১মে) তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মুহাম্মদ আমিনুল হক রামু পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদানের পর থেকে তার নানান নেতিবাচক কর্মকান্ডে অতিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপকারভোগীগন।

অভিযোগ রয়েছে সপ্তাহের একাধিক কর্ম দিবসে শাখায় অনুপস্থিত থেকেও উপস্থিত খাতায় স্বাক্ষর করেন তিনি। কথায় কথায় অফিসের কর্মচারীদের গালমন্দ ও চাকরীচ্যুত করার হুমকি দেন। পছন্দের সদস্যকে লোন না দিলে সংশ্লিষ্ট মাঠ সহকারীকে মানসিক নির্যাতন করেন এমনকি মাঠ সহকারীদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমিতিতে বদলি করে আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ করেন। এদিকে মাসের ২৫ তারিখ বেতন দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে বেতন ভাতা প্রদান না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসিকভাবে হেনস্থা করেন। পাশাপাশি নারী কর্মীদের সাথে অশোভআচরণ এবং মাতৃত্ব ছুটিতে থাকাকালীন প্রাপ্য বেতন ভাতা প্রদান না করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখেন বলে নারীকর্মীদের অভিযোগ।

রেমি বড়ুয়া নামে এক নারী মাঠ সহকারী কান্না জনিত কন্ঠে বলেন, নানা অজুহাতে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থাপক আমিনুল হকের দেয়া মানসিক নির্যাতন আর নিতে পারছেন না। ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণের পাশাপাশি কথায় কথায় তুই তুকারি, এমনকি পরিবার পরিজন নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করতে দ্বিধা করে না।

মাঠ সহকারী সিরাজুল হক, মোঃ আলম ও ওবাইদুল হকও একই অভিযোগ করে মানসিক বিকারগ্রস্ত এ অফিসারের কাছ থেকে পরিত্রান পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

সূত্র বলছে অনিয়মে অভিযুক্ত হওয়ায় গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রাপ্তির কোন সুযোগ না থাকলেও শাখা ব্যবস্থাপকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পূর্ন নিয়মবহির্ভূত ভাবে আমিনুল হক হাতিয়ে নিচ্ছেন ২৬ লক্ষ টাকার গৃহ নির্মাণ ঋণ। যা সম্পূর্ণ নীতিমালা পরিপন্থি।

এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যায় উপকারভোগী সদস্যদেরও রয়েছে একই অভিযোগ, কোন প্রকার গরমিল হলেই উপকারভোগী সদস্যদের অফিসে ডেকে এনে করেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

রামুর মেরংরোয়া নালা পাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য মোঃ সোহেল ও মোঃ জসিম নামের দুই উপকারভোগী অভিযোগ করে জানান, এক বছর পূর্বে তারা একজন ২০ হাজার ও আরেকজন ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। পারিবারিক অসুবিধার কারণে ঋণেরর কিস্তি পরিশোধ করতে বিলম্ব হওয়ায় তাদেরকে অফিসে ডেকে এনে মা বাবার নাম ধরে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ও অশ্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ করেন। এক পর্যায়ে  কিল-ঘুষি, চড় ও থাপ্পড় মেরে শারিরীকভাবে  জখম করে ব্যবস্থাপক আমিনুল।

সুত্র জানা যায়, ইতিপূর্বে আমিনুল কক্সবাজার সদর শাখায় যোগদান করার পর সেখানে সমিতি হতে আদায়কৃত সঞ্চয় ও ঋণের টাকা আত্মসাৎ এবং ফার্নিচার ক্রয় সংক্রান্ত আর্থিক অনিয়মের কারনে ২০১৫ সালে সাময়িক বরখাস্ত হন। পরবর্তীতে জোর তদবির চালিয়ে ৩০মার্চ২০১৬ সালে পুনরায় চাকরিতে যোগদান করতে সক্ষম হলেও লোহাগাড়া শাখায় গিয়ে আবারো আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। ঐ শাখায় যোগদানের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারে অনুমোদন ব্যাতীত ২কোটি ৩৩লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করেন। যার কারনে আমিনুল হককে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। অদ্যবদি এর কোন সুরাহা হয়নি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত রামু পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। একই সাথে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা-ভিত্তিহীন এবং ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে  অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মো. জামিলুর রহমান জানান, আমিনুলের নেয়া ব্যক্তিগত গৃহ নির্মান ঋণ বাতিল করা হচ্ছে এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •