মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান:
পাহাড়ের চূড়ায় সোনালি দীপ্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা চাতোপা জাদি আজ নীরবে মৃত্যুঘণ্টা শুনছে। প্রায় তিন শতাব্দী আগে নির্মিত এই বৌদ্ধ স্তূপটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে,
ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আধ্যাত্মিকতার সাক্ষী এই স্থাপনাটি যেন হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা এলাকায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক জাদি বা লাওয়ে জাদি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩৫০ ফুট উঁচু পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত। স্থাপনাটির সৌন্দর্য যেমন মুগ্ধ করে, তার অবস্থান তেমনি দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ। মাটির ঢালে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে পূজারী ও দর্শনার্থীদের উঠতে হয়। কোনো সিঁড়ি নেই, নেই স্থায়ী চলার পথ। আছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা,
জাদির পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিকের সীমানা প্রাচীর ইতিমধ্যেই ধসে পড়েছে। মূল স্তূপের গায়ে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ ফাটল। এ যেন ধ্বংসের একটি পূর্বাভাস, যা কারও কাছে আর অজানা নয়।
সমাজসেবক রাজনীতিবিদ জাবেদ ইকবাল জানান “জাদিটি শুধু ধর্মীয় প্রতীক নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের উৎস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটির বিলিন মানে আমাদের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়ের অবসান। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন আশা করছি ”
স্থানীয় বাসিন্দা ও মনোবিজ্ঞানী লিটন বড়ুয়া জানান“রামুর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে চাতোপা জাদি অন্যতম। এখনো সময় আছে—প্রশাসন আন্তরিক হলে রক্ষা করা সম্ভব ”
স্থানীয় মিথুন বড়ুয়া বোতাম.. ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জাদির প্রতিরক্ষা প্রাচীর ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে। দ্রুত সংস্কার না হলে আমরা হারাবো আমাদের ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষীকে।”
এ বিষয়ে রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ জাহিদ রাতুলকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন, ফলে তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে এনে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না নিলে এই স্থাপনাটির পতন অবশ্যম্ভাবী। আর তখন হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে দেশের এক অমূল্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য, চিরতরে..