১২০ কেজি স্বর্ণের গিলাফ চড়ানো হবে কাবা ঘরে

সৌদিআরবের পবিত্রভূমি মক্কায় রীতি অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো এবার ও কাবা ঘরের গায়ে স্বর্ণখচিত নতুন গিলাফ চড়ানো হবে। এ উপলক্ষে সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামীকার শনিবার হজের দিন স্থানীয় সময় ফজর নামাজের পর পর নতুন এই গিলাফ চড়ানো হবে। প্রতিবছর ৯ জিলহজ হজের দিন কাবা শরীফে পুরনো গিলাফ পরিবর্তন করে নতুন গিলাফ

চড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। কাবাকে আবৃত করে রাখা কাপড়টিকে বলা হয় কিসওয়া বা গিলাফ। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে নতুন গিলাফ দেখে মুগ্ধ হন। তবে পুরাতন গিলাফ কেটে প্রতিটি দেশের সরকার প্রধানকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়। মূলত কাবা শরীফের গিলাফ তৈরি হয় মক্কার উম্মুদ জুদ নামক এলাকায় বিশেষ কারখানায়। গিলাফ পরিবর্তনের কাজে মসজিদুল হারামের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব দেন। এদিন সৌদি বাদশার প্রতিনিধিসহ দেশটির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
কাবা শরীফের দরজা ও বাইরের গিলাফ দুটোই মজবুত রেশমী কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরো বানানো হয়। চারটি টুকরো চারদিকে এবং ৫ম টুকরোটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরোগুলো পরস্পর সেলাই যুক্ত। কাবা শরীফের গিলাফের প্রতিটি কাপড়ের জন্য প্রয়োজন হয় রেশমি কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম, স্বর্ণের ওজন ১২০ কিলোগ্রাম এবং রুপার ওজন ১০০ কিলোগ্রাম।৪৭ থান সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় এই গিলাফ।এর মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গমিটার।প্রতিটি থান ১ মিটার লম্বা, ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া। এগুলো পরস্পরের সংগে সেলাই করা প্রতিবছর দুটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি করা হয়। একটি হাতে তৈরি বানাতে সময় লাগে ৯ মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়। কাবা ঘরের গিলাফ তৈরির কারখানা বাদশা আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স মক্কা নগরীর জুদ এলাকায় অবস্থিত। কিসওয়া তৈরির কারখানাটি ৬টি অংশে বিভক্ত যথা- বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং এবং অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ। কাবা কিসওয়া তৈরিতে বর্তমানে ২ কোটি ২০ লাখ সৌদি রিয়াল বা ৫.৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় হয়। প্রতিবছর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে গিলাফ তৈরির কাজে ২৪০ জনের বেশি ক্যালিওগ্রাফার নিয়োজিত আছেন।
মতভেদে একটি ঐতিহাসিক সূত্রে বলা হয়েছে, হজরত ইসমাঈল (আ.) প্রথম পবিত্র কাবাঘরকে গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদন করেন। মহানবীর (সা.) পূর্বপুরুষ আদনান ইবনে আইদ এবং মদিনায় তার হিজরতের ২২০ বছর আগে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু বকর আসাদ পবিত্র কাবাঘর গিলাফের মাধ্যমে আচ্ছাদিত করেন। কাবায় সর্বপ্রথম রেশমের গিলাফ লাগান একজন আরব মহিলা, যিনি ছিলেন আব্বাস (রাঃ) এর মা ‘নুতাইলা বিনতে জানাব’।
তুব্বা আবু বকর-এর রীতি অনুযায়ী মক্কার স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আবৃত করতে থাকে এবং তা নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। রাসুল (সা.) ইয়েমেনী কাপড়ের গিলাফ চড়ান। এরপর আবু বকর (রা.), উমর (রা.) এবং উসমান (রা.) ‘কিবাতী’ কাপড়ের গিলাফ চড়ান। বর্তমানে দামী কালো রং সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণখচিত ক্যালিগ্রাফির মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীফ ঢাকা হয়।
বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদীনার দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। ১৩৮২ হিজরিতে বাদশাহ ফয়সাল নতুন করে কারখানা তৈরি করার আদেশ দেন, যাতে উত্তম ও মজবুত গিলাফ প্রস্তুত করা সম্ভব হয় এবং কাবা যেমন শানদার ঘর, তার শানের উপযোগী হয়। ১৩৯৭ হিজরিতে মক্কায় নতুন বিল্ডিংয়ের উদ্বোধন করে তাতে গিলাফ তৈরির আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজিত করা হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •