হ্নীলায় টাকা দিয়ে ভোটার হয়েছেন দুই রোহিঙ্গা পরিবার

কক্সবাজার খবর ডেস্কঃ

 

গত আট দশ বছর পূর্বে মিয়ানমার থেকে স্ত্রী ও সন্তানসহ পুরো পরিবার পরিজন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন সিরাজুল ইসলাম। বাংলাদেশে এসে অবস্থান নেন হ্নীলার লেদা রোহিঙ্গা কাম্পে। কয়েক বছর সেখানে অবস্থান নেয়ার পর স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন দক্ষিণ হ্নীলার পূর্ব পানখালী গ্রামে। এরপর স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন জন্ম নিবন্ধনসহ সব কাগজপত্র। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে চলে যান সৌদি আরবে। বিদেশে থাকা অবস্থায় আর্থিক স্বচ্চলতা আনেন পরিবারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করিয়ে শিক্ষিত করে তুলেন সন্তানদের। তবে স্ত্রী পুত্র সবাই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র বহন করলেও তিনি শুধু মাত্র বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করছেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলের মাঝে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় মেম্বাররা নিজেদের ভোটার বৃদ্ধি করতে রোহিঙ্গাদের ভোটার করিয়েছেন। আর লেনদেন করেছেন বিপুল অংকের টাকাও। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সিরাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল জব্বারের ভোটার তালিকায় জাতীয় পরিচয় পত্র নং ২২১৮৭৭০০০২৪৮। তার জন্ম ০১-১০-১৯৯৩ ইং। তার ভাই ছৈয়দুইল ইসলামের জাতীয় পরিচয় পত্র নং ২২১৮৭৭০০০০৮৮ তার জন্ম ২৮-১১-১৯৯১ ইং। তারা হ্নীলার পূর্ব পানখালীর সিরাজের বাড়ির ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন। ৪ নং ওয়ার্ডের ভোটার হলেও বর্তমানে বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে দুই ভাই বসবাস করছেন ৫ নং ওয়ার্ডে। তবে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের এছাড়া মো: কামাল নামে অপর রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন হ্নীলা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে। তার পিতা আরফ আলী। ভোটার তালিকায় তার জন্ম ২০-১০-১৯৯১। ভোটার নং ২২১৮৭৭০০০২২১। তিনি পূর্ব পানখালী আরফের বাড়ি ঠিকানায় ভোটার হন। স্থানীয় সোনা আলীর নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী সূর্যের হাসি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কাজ করছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন মো: কামালের দাদাও বাংলাদেশী জন্ম নিবন্ধন করেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুধু সিরাজুল ইসলাম কিংবা আরফ আলীর পরিবার নয়, হ্নীলা ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে অর্ধশত রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে ভোটার তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশী পাসপোর্টও। এসব রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্যরা মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন। আবার অনেক ইউপি সদস্য নিজের ভোট ব্যাংক সৃষ্টি করতে রোহিঙ্গাদের ভোটার করেছেন। তাই রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সাথে সাথে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অভিযুক্ত রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, অনেক কষ্ট করে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম তুলতে হয়। তাছাড়া সে সময় কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি। এখন কথা বলা হচ্ছে। তাদের মতে, জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে হয়েছে তাদের। ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব এমনকি গ্রাম পুলিশ সদস্যদেরও টাকা দিতে হয়েছে। তবে, ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: হোসন দাবি করেছেন তারা কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও থেকে ভোটার হয়েছেন। আমরা তাদের ভোটার করিনি। জানতে চাইলে হ্নীলা ইউপিনয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আগে যেসব রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে তাদের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে যেসব রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হবে। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার এস এম শাহদাৎ হোসেন বলেন, পুরাতন যারা ভোটার হয়েছে তাদের বিষয়ে এখনো কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়নি। আপাতত যেসব রোহিঙ্গাদের সনাক্ত করা হয়েছে তা নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •