বোরহান উদ্দিন খোকনঃ
প্রায়শ একটা কথা হারহামেশাই শোনা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আছে তার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত এবং এতিম সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। অথচ বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন এবং তারও আগে থেকে অদ্যবদি সকল গণতান্ত্রিক এবং যুগপৎ আন্দোলনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পাশে থেকে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।তাইতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস।
ইতিহাস সাক্ষী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ত্যাগী কর্মীরা সকল আন্দোলন সংগ্রামে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হয়ে আস্থার প্রতিদান দিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ত্রিশ হাজার কর্মীর আত্মদান পরর্বতীতে রাউফুন বসুনিয়া,মহিউদ্দিন শামীমরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের প্রশ্নে, শিক্ষা শান্তি প্রগতির প্রশ্নে, বঙ্গবন্ধু তথা দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ইস্পাত কঠিন অভেদ্য দেওয়াল। স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির বুলেট বারবার ব্যর্থ হয়েছে এই দেওয়াল ভেদ করতে।
তারপরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এতিমদের সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা দিনরাত খেয়ে না খেয়ে মিছিল,মিটিং, জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে নেতাদের ক্ষমতার আসনে বসায়। ছাত্রলীগের ত্যাগী কর্মীদের কাঁধের উপর ভর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া নেতারা পরক্ষণেই ভুলে যান ছাত্রলীগের অবদান। পরিবারতন্ত্র ও হাইব্রিডদের ভিড়ে আর জায়গা হয় না দিনরাত এক করে পরিশ্রম করা ছাত্রলীগ কর্মীদের।
শিক্ষা শান্তি প্রগতির কর্মীরা বঙ্গবন্ধু’র রেখে যাওয়া অতি মূল্যবান আমানত দেশরত্ন শেখ হাসিনার মুখের দিকে চেয়ে পাওয়া না পাওয়ার ব্যাথা ভুলে গিয়ে আবার মিছিল স্লোগানে “জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু” বলে প্রকম্পিত করে রাজপথ, কারণ তারা জানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র অভিবাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং ছাত্রলীগের ব্যাথা বুঝার সক্ষমতা আছে একমাত্র দেশরত্ন শেখ হাসিনারই।
কারণ বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়েও তার রাজনীতির হাতেখড়ি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইডেন মহিলা কলেজের ছিলেন নির্বাচিত ভিপি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা ভাবা যায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়েও রাজনীতিতে উঠে এসেছেন ধারাবাহিক পর্যায়ে শিখড় থেকে। একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা না পাওয়ার কথা।
অথচ অনেক মূর্খ চাটার দল বলে বঙ্গবন্ধু পরিবার পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি করে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন বর্তমান এমপি, মন্ত্রী, নেতা, নেত্রীর কতজন ছেলেমেয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন বা ছিলেন। তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে গেলে দেখা যায় আই হেইড পলিটিক্স লিখা।
এবার আসি আসল কথায়,
আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নগণ্য কর্মী। কক্সবাজারের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জনপথ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাবের কারণে অন্যান্য জেলার চাইতে এখানে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চর্চা হয়েছে অনেক কম।
এখানকার ধর্মভীরু মানুষগুলোর ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী শক্তি এ জনপথকে পরিণত করেছিল মৌলবাদের অভয়ারণ্যে। এখানে একটা সময় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা করা ছিল রীতিমত অপরাধ। যে কয়েকজন স্রোতের বিপরীতে গিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ চর্চা করতে চেয়েছে তাদের উপর এবং তাদের পরিবারের উপর নেমে এসেছিল অমানুষিক নির্যাতন ও অত্যাচার।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখনও এ জনপথ স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির উর্বরভূমি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকার পরও শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির চর্চা করতে গিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি জামাত শিবিরের প্রত্যক্ষ এবং চোরাগুপ্তা হামলার শিকার হতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। অনেক সহযোদ্ধারা পঙ্গুত্ববরণ করেছিল এবং অবর্ননীয় কষ্ট সহ্য করে বেঁচে আছে অনেকে।
তারপরও হাল ছাড়িনি ওদের রগকাটা,চোরাগুপ্তা হামলা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির চর্চা করে চলেছি আজ অবধি। আপনারা সকলে জানেন কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সঃ এবং কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছিল স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি জামাত শিবিরের ঘাঁটি।
২০০৯ সালে যখন কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সঃ এ ভর্তি হয় তখন দেখি এতো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় যেন স্বাধীনতা বিরোধী সাম্পদ্রায়িক মৌলবাদী শক্তির আখড়া। তার বিপরীতে সিনিয়র বড় ভাইদের নেতৃত্বে শুরু হয় শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির যাত্রা। মুক্তিযুদ্ধের এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার করতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত মৌলবাদী জামাত শিবিরের হামলার শিকার হতে হয়েছিল। দক্ষ ও দুরর্দশী নেতৃত্বের অভাবে মাঝিবিহীন নৌকার মত ছিল আমাদের যাত্রা। সে অনেক কথা, বলতে চাই না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য সারা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ যখন গণ-জাগরণ মঞ্চ তৈরী করেছে আমরাও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না,সকল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এবং প্রগতিশীল সংগঠনকে নিয়ে রাজপথে সোচ্চার হয়েছিলাম। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচারের রায় নিয়ে সারা বাংলাদেশে যখন জামাত শিবির তান্ডব চালিয়েছিল, নিজের জীবন হুমকির মুখে রেখে সহযোদ্ধাদের নিয়ে রাজপথে তাদের মোকাবিলা করেছি। ২০১৪ সালের ৫ ই জানুযারির নির্বাচন নিয়ে যখন সারা বাংলাদেশে বিএনপি জামাত দেশে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল তখনও রাজপথে সোচ্চার ছিলাম জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে।
একপর্যায়ে ত্যাগের প্রতিফলন স্বরূপ ২০১২ সালে কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সঃ এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। তারপর শুরু হয় আরেক কঠিন পথচলা। তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলাম এবং পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সঃ ছাত্রলীগকে রূপ দিয়ে ছিলাম কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সবচেয়ে সাংগঠনিক এবং শক্তিশালী ইউনিটে।
তখনো কক্সবাজার সরকারী কলেজে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির চর্চা করা ছিল একটি দুঃসাহসিক কাজ। সেখানে গিয়েও কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রলীগকে সহযোগিতা ও সমর্থন যুগিয়েছিলাম সে কথা সকলেরই জানা।কিন্তু আজ যখন শুনি সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগে,হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। মনে বড় প্রশ্ন জাগে কেন সহযোদ্ধাদের এত ত্যাগ…?
বৃদ্ধ বাবার এবং প্রবাসী ভাইদের পাঠানো পকেটমানি দিয়ে সকল কর্মসূচি পালন করেছি, কর্মীদের পাশে থেকেছি সবসময় বিপদে আপদে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এখন তার ক্ষমতার তৃতীয় মেয়াদ পার করছে। এখন ডানে বামে সবাই আওয়ামীলীগ। তথাকথিত কাউয়া হাইব্রিডদের ভিড়ে ত্যাগী কর্মীরা এখন কোণঠাসা। কঠিন দুঃসময়ে যারা আমাদের নিয়ে কঠুক্তি করত, পাশে দিয়ে টিপ্পনী কাঁটতো তারা এখন বড় লীগার।
সম্মেলনের কথা শুনে তীর্থের কাকের মত অনেক হাইব্রিড কাউয়ার আগমন ঘটেছে। অথচ কঠিন দুঃসময়ে রাজপথে মিছিলে, স্লোগানে আমরা যখন দিন রাত এক করে সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতা বিরোধী জামাত শিবিরের সাথে লড়েছি তখন তারা কেউ ছিল না।
তাহলে তারা কারা? ঐযে বলছিলাম নেতার ছেলে,নেতার আত্নীয় স্বজন অথবা হাইব্রিড(কাউয়া) যাদের কিছুদিন আগেও ছাত্ররাজনীতির প্রতি ছিল চরম অনীহা যারা ফেইসবুকে নিজের প্রোফাইলে লিখে রেখেছিলো আই হেড পলিটিক্স।
এই কাউয়াদের ভীড়ে আজ রাজপথের রৌদে পোড়া ত্যাগী কর্মীরা বড্ড অসহায়। রাজপথে তাদের ত্যাগ শ্রম না থাকলে কি হয়েছে তাদের আছে বাবা, মামা,চাচা বড় বড় লবিং। মনে বড্ড প্রশ্ন জাগে তাদের হাতে জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কতটা নিরাপদ। এতিম ত্যাগী কর্মীগুলোর মনের ব্যাথা তারা কি কখনো পারবে বুঝতে?
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এখন তার সুসময় পার করছে, এসব মৌসুমী ছাত্রলীগের আগমন স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন জাগে একটাই দুঃসময়ে কি তাদের কখনো পাওয়া যাবে?
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবেন্দের কাছে তৃণমুলের কর্মী হিসেবে একটাই প্রত্যাশা ও নিবেদন করছি রাজপথের ত্যাগী কর্মীদের হাতে উঠুক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার জেলা শাখার নেতৃত্ব। যদি দক্ষ, ত্যাগী, দুরর্দশী কর্মীর হাতে নেতৃত্ব না থাকে, তাহলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা কক্সবাজার জেলা সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী শক্তির অভয়ারণ্য হতে বেশিদিন সময় লাগবে না।
ভাল থাকুক, নিরাপদে থাকুক জাতির পিতার হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জেগে থাকুক জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হয়ে।
বোরহান উদ্দিন খোকন
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ ও
সাবেক সাধারণ সম্পাদক,
কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ছাত্রলীগ।