ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী

চার বছরের স্নাতক ও এক বছর ইন্টার্ন শেষ করেও  প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

বার কাউন্সিলের নীতিমালা অনুসরণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের ২৪তম ব্যাচ ও ২৫তম ব্যাচে অতিরিক্ত  শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়ার কারণে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইন বিভাগে প্রতি ব্যাচে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি না নেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয় বার কাউন্সিল। কিন্তু বার কাউন্সিলেরনির্দেশনা অমান্য করে জুলাই/১৪ সেশনে (২৪ তম ব্যাচ) এবং ডিসেম্বর/১৪ সেশনে (২৫ তম ব্যাচে) ৫ শতাধিক শিক্ষর্থী ভর্তি নেয়। ফলে স্নাতক শেষে এ দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের ২৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফ আহমেদ  সিভয়েসকে জানান, আইন বিভাগে ৪ বছরের স্নাতক এবং প্রায় ১ বছর শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে ২৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫ বছর অতিক্রান্ত করেছি। কিন্তু আইনজীবী তালিকাভুক্তি  পরীক্ষার শেষ সময়ে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারছি না।

 

 

 

শিক্ষানবিশ আইনজীবী চুক্তির ১ম ইন্টিমেশন ফরমে অন্য পেশায় অর্ন্তভুক্ত না হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় অন্য কোন পেশায় যাওয়ার চিন্তা করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি না পাওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব শঙ্কায় আছি।

এবার তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য আরোও ৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে জানিয়ে অন্য এক শিক্ষার্থী জানান, আইনজীবি তালিকাভুক্তিকরণ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এবারের পরীক্ষার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা এবং ফলাফল প্রকাশ হতেই প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হয়ে যাবে। তারপর পরবর্তী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে অতিবাহিত হবে আরো এক বছর।

এবারে অনুষ্ঠিতব্য আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি না পেলে ক্যরিয়ার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতা মূলক সময়ে আমরা ৫ বছর অতিক্রম করেছি এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার প্রত্যয়ে। কিন্তু শেষ মূহুর্তে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি না পেলে সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই।

 

তবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রক্টর আহমেদ চৌধুরী রাজীব এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝার অনেক ঘাটতি রয়েছে দাবী করে  বলেন, এ বিষয়ে বার কাউন্সিল আমাদের কাছ থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বর অঙ্গিকার নামা চেয়েছিল। সেটা আমরা ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই দিয়েছি । তবে চলমান সংকট উত্তরণের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি সিভয়েসে কে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি আপনার সাথে এর বেশি কথা বলতে চাইছি না।’

এদিকে এ নিয়ে গতকাল ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ও ব্যাচ অ্যাপ্রুভালের দাবিতে ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এর আগে গত রোববার (৬ অক্টোবর) একই দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে  মানববন্ধনও পালন করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

 

 

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (পুলা)’র সভাপতি এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী গাজী সাদেক সিভয়েসেকে বলেন,”এ সংকটের ব্যাপারে বার কাউন্সিল এবং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের পক্ষে পারস্পারিক যুক্তি দিচ্ছেন। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,” শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে না। এটি মানবিক আবেদন এবং ভার্সিটি, বার কাউন্সিল এর সাহায্য চাচ্ছে সর্বোপরি মাননীয় আদালতে একটি ইকুইট্যাবেল, মানবিক ও ন্যায় বিচার চাচ্ছে।

শিক্ষানবিশ চুক্তির বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে ১ম ইন্টিমেশন ফরম জমা দেওয়ার সময় অঙ্গীকারনামা দিয়ে বলেছেন তারা অন্য কোন পেশার সাথে জড়িত থাকবে না কেবল সিনিয়রের অধীনে থেকে শিখবেন। তারা আবার জেলা আইনজীবী সমিতিতেও শিক্ষানবিশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতি তাদের লাল টাই ও আইডি কার্ড দিয়েছেন। তারা বার কাউন্সিলে ইন্টিমেশন জমা দিলে সেটি বার কাউন্সিল রিসিভ করেন, সাইন ও সীলসহ তাদের রিসিভিং কপি দেন। বার কাউন্সিল তাদের থেকে নির্ধারিত ফি গ্রহন করেছে। এখন শেষ সময়ে এসে যদি রেজিস্ট্রেশন কার্ড না পায় তাহলে এতগুলো ছেলে-মেয়ের জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। অনেকেই ইতিমধ্যে হতাশায় ভুগছেন। তাদের ভোগান্তির জন্য ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কোন অপরাধ, অবহেলা ও দোষ থাকলে সেটাও তদন্ত করে ভার্সিটির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

  •  
  •  
  •  
  •  
  •