বিদায়ে বেদনার কান্না ঝরে অন্তরে ইকবাল বদরীর ফেরা শেষ আলয়ে

বিশ্বজিত সেনঃ

মানুষ যদি সময়-অসময়ে একবার জীবন থেকে ফিরে যায়, তখন সে অনেকটা অতীতের ঝুলিতে জমা পড়ে। আবার স্বীয়কর্ম, ত্যাগের বিনিময়ে নিজের পথটাকে যদি সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের পথ রেখা উন্মোচন করে যায় তাহলে তিনি বর্তমানের পথরেখায় অনেক বছর অনেক কাল ধরে মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে।

আমাদের শৈশবের বন্ধু একেএম ইকবাল। পরবর্তীতে যে ইকবাল বদরী নামে খ্যাত হয়েছিলো। কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার বদরখালীতে তার জন্মস্থান। নাড়ির টান হওয়াতে এক সময়ে তার এবং পরিবারের সদস্যদের অনেকের নামের শেষে বদরী নামটি সংযুক্ত হয়ে যায়। আমার যতটুকু মনে পড়ে সে যখন হাইস্কুলে স্কুলে পড়তো, প্রিয়বন্ধু প্রয়াত ইসমাইল মার্শাল, আমির মোহাম্মদ (বাছুর) এবং রনজন পালের মাধ্যমে তার সাথে দেখা-পরিচয় বন্ধুত্ব হয়েছিলো। সমসাময়িক হওয়াতে ইকবাল আমাদের বন্ধুত্বের বাহুডোরে চলে আসে। আমি রনজন, মার্শাল, বাছুর, মুকুলরা কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছি। ইকবাল পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি হাইস্কুলে পড়েছে।

সে সময় প্রধান সড়কস্থ বাবুল সেলুনের পার্শ্বে ইকবাল স্টোর নামে তাদের পরিবারের একটি দোকান ছিল। যেটা কক্সবাজারে খুব জনপ্রিয় হিসেবে নাম করেছিলো। বাবার সাথে ঐ দোকানে আসতাম এবং পূজোসহ বিভিন্ন উৎসবে শার্ট-প্যান্টসহ পরিধানের অন্যান্য সামগ্রী সেখান থেকে আমরা কিনতাম। ঐখানে ইকবালের সাথে মাঝে মধ্যে দেখা হয়েছে। তুই-তোকারি শুরু হয়ে যায় ইকবাল স্টোর থেকে। সময় গড়িয়ে গেলে বন্ধুত্বটা আরো গভীর হয়ে যায়। ইকবাল শৈশবে আমাদের সাথে লেখাপড়া করলেও কলেজ পর্যায়ে ধারাবাহিকতা ছিলনা, কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধনটা নিখাদ ছিলো বলে ইকবালসহ অন্যান্যদের সাথে যথারীতি বন্ধুত্বটা বজায় ছিলো।

জীবনের পথ চলায় আমরা কয়েকজন চট্টগ্রাম-ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষায়তনে লেখাপড়া করার জন্য স্থান পাল্টালে ইকবাল বাছুর মার্শালরা কক্সবাজারে লেখাপড়া করে। কিন্তু বন্ধুত্বটা থেকে যায় শৈশবের মতো। ইকবালকে আমি বিশেষভাবে আবিষ্কার করি যখন ১৯৮১ সালে ১মে আমার বাবার মৃত্যু হয়। সেদিন আমি কক্সবাজার ছিলাম না। চট্টগ্রামের ছাবের আহমদ আসগরির সাথে দৈনিক গণকণ্ঠের ব্যুরোতে কাজে যোগদান করাতে বাবার মৃত্যুর শেষ কয়েকটা দিন কাছে থাকতে পারিনি। কিন্তু মার্শাল, ইকবালসহ অন্যান্যরা ছিলো ছায়ার মতো।

পরে শুনেছিলাম আমাদের বাসভবন থেকে শুরু করে শ্মশানে যাত্রা এবং দাহ অনুষ্ঠানের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত ইকবাল সবসময় সবার সাথে ছিল। দাহ অনুষ্ঠানের শেষ দিকে চট্টগ্রাম থেকে আমি এসে অশ্রুসজল নয়নে বাবাকে বিদায় জানাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম শ্মশানের মধ্যে ইকবাল আছে, এক সময় আমার পিঠে হাত রেখে বললো, জ্যাঠাতো চলে গেলো, আমরাতো আছি, ভাইয়ের মতো সারাজীবন থাকবো। এই কথাটার মর্মবেদনা অনুভব করলাম ২২ মার্চ তারিখ ইকবালের জানাযা শেষে তার লাশটা যখন সবাই কবরে নামাচ্ছিলো। মনে হলো আমার নাড়ি ছেড়া একভাই সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলো। তার আগের দিন ২১ মার্চ ২০১৯ দুপুর ১২টায় ইকবাল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চকরিয়াতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

ইকবাল বদরী, জীবনের অম্ল-মধুর অনেক পথ পাড়ি দেওয়া জনগণের এক নায়ক। আমার জানামতে সে ছিলো অবিভক্ত চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকার এক অসাধারণ জনবান্ধব নেতা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কক্সবাজারের সামনের কাতারের নেতা হলে, মতের পথের ভিন্নতা থাকলেও বন্ধুত্বের বন্ধনের মধ্যে কোনদিন ছেদ পড়েনি। শৈশব, তারুণ্য, যৌবনের অনেক পথ, দ্বন্দ্বমুখর সময় পাড়ি দিয়ে পারস্পরিক মনের টানের ভিন্নতা হয়নি।

এক সময় কক্সবাজারে আমরা সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সমকাল নাট্য ও সাহিত্য সম্প্রদায় নামে একটি প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলাম। মার্শাল মো. মোহিবুল্লাহ মোর্শেদুল আযাদ আবু, আশীষ ধর, ইকবাল বদরী, বাছুর, শ্যামল রায়, জয়নুল আবেদীন মুকুলসহ অনেকে এই সংগঠনটির সাথে জড়িত ছিল। ’৭০-’৮০’র দশকে সমকাল সম্প্রদায় সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চায় কক্সবাজারে ভালো অবদান রেখেছে যেটার সুফল আমরা এখনো ভোগ করছি।

ইকবাল বদরীর কথা বলতে গেলে তার মরণ ঘুমের বিদায় বেলার জানাযার স্মৃতিটা বারবার মনে পড়ে। আমি তার জানাযার পূর্ব থেকে বদরখালীতে ছিলাম। আগের দিন বেদনাদায়ক ইকবালের মৃত্যুর কথা শোনার পর আর স্থির থাকতে পারিনি। সারা রাত চোখের জল ছড়িয়ে সকালের দিকে চলে গেলাম বদরখালীতে। বদরখালী সমবায় কৃষি উপনিবেশ সমিতি (যেটা এশিয়ার ২য় বৃহত্তর সমবায় সমিতি) নামে পরিচিত। মৃত্যুকালীন সময়ে সে ছিল সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তাদের পরিশ্রমের ফসল সমিতির নবনির্মিত কার্যালয়ের সামনে ইকবালের লাশটি ফ্রিজার ভ্যানে রাখা হয়েছিলো।

কাঁচের ভেতর দিয়ে তার ঘুমিয়ে যাওয়া মুখটি বারবার দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। অজান্তে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিলো টপটপ করে। সেসময় আমার মনে হয়েছিলো ঘুম ভাঙানিয়া শৈশব, তারুণ্য আমাদের ডাকছে। পাবলিক লাইব্রেরির মাঠ, সমুদ্র সৈকত, নাটকের মঞ্চ, ২১শে ফেব্রুয়ারির সকালের প্রভাতফেরীতে মনে হয় এখনো হাঁটছি। ইকবাল তুইতো চলে গেলি এ জীবন থেকে তোর এই বেদনার জ্বালা কিভাবে মুছবো জীবন থেকে, আগামী সময় থেকে। এভাবেতো তোর যাবার কথা ছিল না।

এক সময় সম্বিত ফিরে পেতে দেখলাম চকরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ একেএম গিয়াসুদ্দিন আমাকে ডাকছে অফিসের নিচে বসার জন্য। ব্যাথাযুক্ত মনে সবার সাথে বসে পড়লাম অফিসের বারান্দায়। পাথর শোকটা মনের একূল-দুকুল ভাঙছে। বাদেজুমা বদরখালী হাই স্কুল প্রাঙ্গণে শুরু হলো ইকবালের জানাযার অনুষ্ঠান। মাঠের এক কোণে দাঁড়ালাম জানাযার অনুষ্ঠান দেখার জন্য। দুপুরের দিকে তীব্র গরমের মধ্যে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ হাই স্কুলের দিকে হেঁটে, গাড়িতে করে আসছে। এক সময় জনস্রোতের বিষয়টা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এত মানুষ যে মুহূর্তের মধ্যে চলে আসলো সেটা অভাবনীয় মনে হয়েছে।

পর মুহূর্তে মনে মনে বললাম ইকবাল তুই যে কত বড় নেতা এবং সাধারণ মানুষের বন্ধু ছিলি, তোর জানাযার মাধ্যমে মানুষ তাদের ভালোবাসাটা ভালো করে জানিয়ে দিলো। যথারীতি জানাযা হলো, আমি আমার ধর্মীয়মতে ইকবালের জন্য প্রার্থনা করলাম। মরণের ওপারে সে যেন শান্তিতে থাকে করুণাময় ঈশ্বরের কাছে সেটা নিবেদন করলাম। তারপর তাঁর দাফন হলো, মাটির মানুষ ফিরে গেলো ‘মাটির ঘরে’ এই পৃথিবীর পরম আশ্রয়ে। সূর্যটা পশ্চিমের দিগন্তে ধীরে ধীরে হেলে পড়লে শোকার্ত মন নিয়ে রওনা হলাম কক্সবাজারের দিকে।

আমাদের বন্ধু ইকবাল এক সময় সকলের বন্ধু হয়ে যায় বিশেষ করে সাধারণ মানুষের। যার জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং বদরখালী সমবায় কৃষি উপনিবেশ সমিতির কর্ণধার হতে সময় লাগেনি। তাঁর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় কক্সবাজারে অনেকবার দেখা হয়েছে, ভাত খেয়েছি একসাথে। কিছুক্ষণ আড্ডা আর তারুণ্যের স্মৃতি হাতরানো বিষয় নিয়ে এভাবেই চলছিল জীবন। ভিলেজ পলিট্রিক্স এবং বিরোধী দলীয় রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেছিলো কয়েকবার।

আবার হুলিয়া নিয়ে চাকুরিসহ বিভিন্ন কাজ করেছে। কিন্তু সে গণমানুষের সাথে ছিল সেজন্য তাদের সাথে যোগাযোগ থাকতো বেশি করে। গ্রামের সাধারণ মানুষ ছিল তার মুখ্য বিষয়। মানুষকে ইকবাল ভালোবেসেছিলো বলে আমি তাঁর এলাকার মানুষের কান্নার শব্দটা বেশি করে শুনেছি। এখানেইতো একজন রাজনৈতিক কর্মী, নেতা, জনপ্রতিনিধির সার্থক এবং সর্বোচ্চ পরিচিতি।

ইকবাল বদরী জীবন মননে সবসময় একজন স্বনিষ্ঠ কর্মজীবী মানুষ ছিলেন। তার সততা কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার ব্যাপারে কারো কোন অনুযোগ ছিলনা। এমনকি তার ভিন্নমত, ভিন্নদলের লোকেরা বলতো যে ইকবালের পথচলার ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও তারা তাকে গ্রহণ করতো একজন ভালো মানুষ হিসেবে। যার জন্য তার মৃত্যুতে কেঁদেছে বিভিন্ন দলমত, সম্প্রদায়ের মানুষ। এখানেই একজন ইকবাল বদরীর অনেক কিছু পাওয়া।

বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি দেশে-বিদেশে একটি আলোচিত প্রতিষ্ঠান। শতাব্দী পেরিয়ে একুশ শতকে একটি সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটি এলাকা কিভাবে চলে তা সংগঠনটি ভিন্নভাবে সবাইকে মনে করিয়ে দেয়। জমির ভোগ, বণ্টন, মালিকানা ভিত্তিক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ একসাথে অবস্থান এবং এগিয়ে যাবার বিষয়টি তা এই উপমহাদেশসহ বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

ইকবাল বদরীর দায়িত্বকালীন সময়ে দেশের প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার সমিতির মধ্যে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতি কৃষিভিত্তিক/ গ্রাম উন্নয়ন শ্রেণিতে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সমবায় পুরস্কার (২০১৫) অর্জন করেছে। ইকবাল বদরী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সমিতিকে উন্নয়ন সুনামের ক্ষেত্রে এক অসাধারণ স্থানে নিয়ে গিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের আয়বৃদ্ধি, বিশালাকারের অবকাঠামোর উন্নয়ন, সমিতির মর্যাদাকে একটি নতুনতর অধ্যায়ে পৌঁছিয়েছিলেন। একুশ শতাব্দীর নতুন প্রজন্মের জন্য একজন দায়িত্বশীল মানুষ গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়ভাবে মর্যাদার সাথে উপনীত করে দেশ ও জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলেন। তাঁর হঠাৎ অসময়ে মৃত্যু শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানকে নয় মূলত চোখে পড়ার মতো সৎ আকাক্সক্ষার মৃত্যু হলো।

জনগণের ইকবাল, ভালোবাসার ইকবাল তুই কত আপনভাবে মাটি ও মানুষের কাছে পৌঁছেছিলি-সেটার সাক্ষী আমিসহ অনেকেই আছেন। এভাবেতো চলে যাবার কথা ছিল না। হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন অসুখ নিয়ে পরম মাতৃসেবা, মানুষের সেবা সর্বোপরি জনগণের সেবা কয়জনইবা করতে পারে। রাজনীতি-সমাজসেবার বিকিকিনির হাটে তুইতো পসরা-বা পসরাজীবী হসনি। সম্পদের চিন্তায়, লোভের সমুদ্রে গা ভাসাসনি বলে মানুষ এখনো তোকে ভালোবাসে। তোর এই মর্যাদা আমরা অনুভব করি বলে তোর কাছে বারবার ফিরে আসা। জীবনের গতিতো গন্তব্যহীন-তবে শেষকাল হচ্ছে পরকাল।

একটি সম্প্রীতির মূল্যবোধ তুই সৃষ্টি করেছিলি বলে তোকে সবাই অন্যভাবে ভালোবাসতো। যেখানে এক হয়ে যেতো জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়। তোর কথা মনে পড়তে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। তিনিতো তোকে দেখতেন ছেলের মতো। তাকে যখন দেখতে আসতি খুব খুশী হতেন, আর্শীবাদ করতেন। আমার মা’র মৃত্যুর দিনেও তোর ফিরে আসা, চোখের জল ফেলা, শবযাত্রী হয়ে দাহ অনুষ্ঠানে যাওয়া, হতভাগা… তোকে কিভাবে ভোলা যায়, কারা ভুলতে পারে …!

ইকবাল তোর সহায় সম্পদ কি ছিল বা কি আছে জানিনা। কিন্তু তুই যেটা রেখে দিয়েছিস-সেটাই তোর আসল পরিচয়। সহায় সম্পদ অর্থবিত্ত মানুষের সাথে যায়না। আকাশের মেঘমালার মাঝে সূর্য ওঠে সূর্য ডুবে যায়, প্রকৃতির বিবর্তন হয় প্রকৃতির নিয়মে। কিন্তু মানুষের চলে যাবার মাঝে-সেতো আর আসেনা। হৃদয় ভারাক্রান্ত হয় আনমনে। আমাদের ইকবালতো নেই! স্মৃতি চিহ্ন থেকে যায় মনের গহীন কোণে। এক সময় সবকিছুর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। বেঁচে থাকে জেগে থাকে মানুষের কর্মময় এবং প্রকৃত মানুষের স্মৃতি। তোর পরিচয়টা মানুষের ভালোবাসার মধ্যদিয়ে উন্মোচন করে গেলি। যাবার চিহ্নটা জেগে থাকুক-মানুষের ভালোবাসার অন্তরে। ভালো থাকিস বন্ধু দেখা হবে আবার অন্য জনমে।

লেখক-বিশ্বজিত সেন : সাংবাদিক, গবেষক, পরিবেশবিদ।
ই-মেইল : bishawjitsen@gmail.com

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •