২০-২১ বছর নয়, প্রদীপ-চুমকি দম্পত্তি সাজা ভোগ করবেন ১০ বছর!

সিবিকে ডেস্কঃ

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশকে ২০ বছর ও চুমকি কারণকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও এ মামলায় তাদের কারাভোগ করতে হবে মোটে ১০ বছর।

বুধবার (২৭ জুলাই) আলোচিত এ মামলার রায়ের পরে আইনজ্ঞদের সাথে আলাপ করে এমন তথ্যই জানা গেছে।

এদিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালত ৪টি ধারায় প্রদীপ-চুমকি দম্পত্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। সবগুলো সাজা মিলিয়ে প্রদীপের ২০ বছর ও চুমকির ২১ বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা হচ্ছে। তবে আদালত বিভিন্ন ধারায় দেওয়া সাজা একইসঙ্গে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন। কার্যকর হলে তাদের কি ২০ ও ২১ বছর কারাভোগ করতে হবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে এই প্রশ্নের উত্তরে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘এই রায়ে ২০ ও ২১ বছরই সাজা ধরবেন। কিন্তু যেহেতু আলাদা আলাদা সাজা একসাথে চলবে সেহেতু সর্বোচ্চ যে সাজাটা আছে সেটাকেই কাউন্ট করতে হবে। ওটাই তাদের ভোগ করতে হবে।’

আরেকটু ব্যাখ্যা করে ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন ধারায় আদালত আলাদা আলাদা দণ্ড দিয়েছেন। এগুলো আবার একসাথে কার্যকর শুরু হবে। অর্থাৎ একটা ধারায় ১০ বছর, আরেকটায় ৮ বছর, আরেকটায় ২ বছর এভাবে সাজা দিয়েছেন। এই সাজাগুলো সব একসঙ্গে গণনা শুরু হবে। তাহলে এর মধ্যে সর্বোচ্চ যে সাজাটা সেটাই তাকে ভোগ করতে হবে।’

এই বিষয়ে ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সাথে একমত পোষণ করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে সেহেতু এই সাজাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ যে কারাদণ্ডটা সেটাই আসলে তাদের ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ ১০ বছরই। এক্ষেত্রে জেল কোড অনুযায়ী সাজা ভোগের পরিমাণ এই ১০ বছর থেকে কিছুটা কমবে।’

প্রসঙ্গত রায়ে আদালত মানিলন্ডারিং আইনের ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ৪ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় উভয় আসামিকে ২ বছর করে কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় উভয় আসামিকে ৮ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই আইনের ২৬ (১) ধারায় চুমকিকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তবে ২৬ (১) ধারায় আসামি প্রদীপ কুমার দাশ খালাস পেয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের এই মামলা দায়ের হয়। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ করে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়।

অভিযোগপত্রে প্রদীপের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে সেই সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তরপূর্বক মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়। যদিও তার স্ত্রীর এসব সম্পদের ঘোষনায় বলা হয়েছিল চুমকি একজন মৎস্যজীবী । এছাড়া উভয়ের বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দুদক।

অভিযোগপত্রে চুমকি কারণের নামে নগরের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা বাড়ি, পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমি এবং কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকার একটি ফ্ল্যাটের বিষয় উল্লেখ আছে। তবে অভিযোগপত্রে মাছের ব্যবসা থেকে চুমকির আয়ের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের মামলায় আসামি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।-সিভয়েস

  •  
  •  
  •  
  •  
  •